0
এখনকার সিসিটিভি আর ডিএনএ শনাক্তের যুগে চুরি কিংবা ডাকাতি করে সফল হওয়াটা মোটামুটি অসম্ভব । কেননা হলিউডি মুভির রঙ- চঙ্গে আর চোখ ধাঁধানো সব অ্যাকশানে সবাই মোটামুটি চোখ বুজেই রেখেছেন এই ভেবে যে এটা ছবিতেই সম্ভব। কিন্তু বাস্তবের জগতে সিনেমাকে হার মানানো চোরও আছেন, যারা প্রতিরক্ষা কিংবা প্রযুক্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার!! এমন কিছু চুরির গল্পই শোনাবো আজ…
১। ফ্রেঞ্চ ‘ভ্যাকুয়াম গ্যাং’
সবচেয়ে চমকপ্রদ লেগেছে এদের আইডিয়াটা। ২০০৬ সালের দিকের কাহিনী, অপরিচিত এই দলটা সাধারণ ড্রিল আর মডিফাইড ভ্যাকুয়াম ছাড়া আর তেমন কিছুই ব্যবহার করেনি। Monoprix নামের ফ্রান্সের একটি সুপারমার্কেটের ক্যাশ জমা রাখার সিস্টেমের একটা দুর্বলতা খুঁজে পায় এরা । সেখানে ক্যাশের খামগুলো সেকশন টিউব দিয়ে সেফটি বক্সে যেতো, আর তাই তারা সেই পথের মাঝেই একটা শক্তিশালী ভ্যাকুয়াম টিউব বসালো যা খামগুলোকে টেনে আনবে!!
এই সিস্টেমটা পুরোই ইউনিক ছিল কেননা সাধারণত বেশিরভাগ সময়ই সবাই প্লাজমা কাটার কিংবা থার্মাল লেন্স ব্যবহার করত, যা দিয়ে পরবর্তীতে ধরা পড়বার একটা চান্স থাকতো। কিন্তু এক্ষেত্রে কোন সুত্র ছাড়াই তারা ১৫ রাত ধরে সর্বমোট ৮,০০,০০০ ডলার চুরি করতে সক্ষম হয়েছিল !!!
২। বেকার স্ট্রিট বারগ্লারি
এটা ১৯৭১ সালে, লন্ডনে বেকার স্ট্রিট ব্যাংকে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় চুরির ঘটনা । এখানের ভল্ট থেকে প্রায় ৩ মিলিয়ন ক্যাশ এবং মূল্যবান দলিল চুরি হয়। এক্ষেত্রে এই দলটা ব্যবহার করে বিভিন্ন মেটাল কাটিং টুলসের কম্বিনেশন যেমন থার্মাল লেন্স আর বিস্ফোরকের, আর এজন্য তারা ব্যাংকের পাশের একটি দোকানের ভিতর থেকে এই কার্যক্রমটা চালায়, এ সময় স্থানীয় একটা রেডিও ট্রান্সমিশনে সমস্যা হওয়ার কারণে তারা পুলিশকে জানায়, সেই ডাকাতি চালানোর সময়ও তারা ব্যাংকে তল্লাশি চালায় কিন্তু মূল ভল্টের গেটে কোন চিহ্ন না পাওয়ায় তারা ফেরত যায়!! এই বিখ্যাত চুরি সম্পর্কে আর কিছু না বলি কেননা এই প্রেক্ষাপটেই বানানো হয়েছে ২০০৮ সালে জ্যাসন স্টাথাম অভিনীত “The Bank Job” মুভিটি, যদিও বলা হয় সেখানে ছবির জন্য কিছু কল্পকাহিনী যুক্ত করা হয়েছে… দেখাই যাক, ‘যা কিছু রটে তার তো কিছু হলেও ঘটে। ’
৩। প্যারিস মর্ডান আর্ট মিউজিয়াম বারগ্লার
২০১০ সালের মে মাসের দিকের ঘটনা। একজন চোর একাই প্রায় ১০০ মিলিয়নের কাছাকাছি মুল্যের ছবি চুরি করে প্যারিস আর্ট মিউজিয়াম থেকে, যার মধ্যে পিকাসো কিংবা ম্যাতিসে এর মতো শিল্পীদের মাস্টারপিসও ছিল!! অবিশ্বাস্য হলে সত্য যে, অ্যালার্ম বেলগুলো বাজেনি এবং সেই চোর মহাদয় কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই জানালা ভেঙ্গে ফ্রেম থেকে খুলে ছবিগুলো নিয়ে যায়। এমনকি সেই সময় সিকিউরিটির লোকেরাও ছিল কিন্তু তারা কোন শব্দও শুনতে পায় নি কিংবা ভাঙ্গা জানালা চোখেও পড়েনি। ভাবা হচ্ছিল এই চুরিতে ক্ষতি হবে প্রায় ৪৩০ মিলিয়ন এর মতো কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তা ১০০ তে নেমে আসে। পুলিশ সন্দেহ করছিল যে, এটা কারো ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্য করা কারণ এমন ঘটনা আশে-পাশের শহরেও হয়েছিল, ২০১১ এর পরও কাউকে ধরতে পারা যায় নি, তখন পুলিশ ধরেই নিয়েছে, এই ছবিগুলো আর সেই চোরের অধিনস্ত নেই। কিন্তু এই চুরির ঘটনাই প্রমাণ করে তাদের দুর্বলতম নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে।
ঠিক এরকমই আরেকটা ঘটনা হয়েছিল ১৯৯০ এ, বোস্টনে, সেখানে ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি। প্রায় ৫০০,০০০,০০০ ডলার মূল্যের আর্টপিস চুরি হয়েছিল তখন !!!
৪। স্কুল অফ তুরিন
বিশ্বের বিখ্যাত পাঁচটি ডাকাতির কথা যদি আসে তো তার মধ্যে এটি একটি। স্কুল অফ তুরিনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিরা ডাকাতি হয়, ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার, আনুমানিক স্থানীয় সকাল ৭টার সময়। লিওনার্দো নোটারবার্তলো, যে গ্যাং এর প্রধান ছিল, সে আগেরদিন রাতেই ভল্টের ভিতরে ঢুঁকে যেতে পেরেছিল অটোমেটিক দরজা বন্ধ হবার আগেই। ব্যস, কেল্লা খতম, স্পার্টাদের মতো ঢুকে পড়বে ভিতরে, বন্ধ করে দেয়া হয় মোশন ডিটেক্টরকে সিলিকনের স্প্রে দিয়ে আর সাধারণ টেইপ দিয়ে লাইট ডিটেক্টরকে!!
এবার কাজ শুরু হয় ভল্ট খোলার। ভল্টে ডুয়েল লক সিস্টেম থাকে – একটা কম্বিনেশন এবং আরেকটা সাধারণ তালা। তালার চাবিটার কপি ছিল কিন্তু কম্বিনেশনটা কিছুটা ঝামেলার ছিল, কেননা সেখানে কতগুলো ম্যাগনেট থাকায় তা অ্যালার্ম হিসেবে কাজ করত, সে ক্ষেত্রে তারা সেটাকে আলাদা করে ফেলে সিস্টেম থেকে। তারপর সোজা ভল্টের ভেতর এবং পৃথিবী বিখ্যাত চৌর্যবৃত্তি চলতে থাকে!! তারা ১৬০ টি বক্স থেকে শুধু ডায়মন্ডই নেয় নি, সেগুলো নিয়মমাফিক ভাবে বিক্রির কাগজ পত্রও উদ্ধার করে নেয়!!
এর বহুদিন পরে সেই গ্যাং এর প্রধান লিওনার্দো নোটারবার্তলো কে পুলিশ ধরতে পারে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে যা পাওয়া গিয়েছিলো সেই ঘটনাস্থলে তারই অর্ধেক খাওয়া স্যান্ডউইচ থেকে!! পরবর্তীতে তার ১০ বছরের সাজা হলে বাকি আর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায় নি!!

৫। উইকিলিকস
এদের ক্ষেত্রে প্রথমেই যেটা মনে আসে, “তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে। ” যদিও কোন চুরির লিস্টে এনাদের নাম আসবে না, কিন্তু আমার কাছে অন্তত সত্য ঘটনা কিংবা তথ্য জানানোর ক্ষেত্রে তাদের সেই পন্থাই অবলম্বন করতে হচ্ছে বিধায় আমার লিস্টে তাদের রাখলাম। নতুন করে বলবার কিছু নেই, “we open governments” এই স্লোগান নিয়ে চলা উইকিলিকসের যাত্রা ২০০৬ সালে। তাদের ওয়েবসাইটে ঢুকলেই চোখে পড়বে বিশাল এক বালুঘড়ি, যেটা অল্প অল্প করে ভরে দিচ্ছে নিচের অসমাপ্ত পৃথিবীকে। আফগানিস্তান ও ইরাকের যুদ্ধের ভিতরকার তথ্যচিত্র প্রকাশ করে প্রথম বোমা ফাটায় এরা। তারপর প্রায় ৭৭৯টা ফাইল তারা প্রকাশ করে গুয়ান্তানামো বে কারাগারকে নিয়ে। এরই মধ্যে জনপ্রিয়তার কারণে এর চিত্রায়নও হয়ে গেছে, বেনেডিক্ট কাম্বারবাচ অভিনীত ‘দ্যা ফিফথ স্টেট’
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে, হঠাৎ এই ধরনের বিষয়ে লেখার কারণ কি!! তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ফেলনাও নয়… নিজের ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা দিয়েই শেষ দিচ্ছি
“তখন আমি বেশ ছোট, স্কুলে সবে ভর্তি হইয়াছি। কেউ যদি আমায় জিজ্ঞেস করত,’বড় হয়ে কি হবে?’ আমি বুক ফুলায়ে বলতাম, ‘আমি বড় হয়ে চোর হব।’
কেন যে এত কিছু ছাড়িয়া ‘চোর’ হতে চাইতাম তাহার রহস্য আজো আমি উদ্ঘাটন করিতে পারি নাই, কিন্তু এই কথা শুনিয়া সবার মাঝে যখন হাসির রোল পড়িয়া যাইত, তখন এটা বলা ছাড়িয়া দিলাম। ভাবা শুরু করিলাম, কি হওয়া যায় বড় হইয়া??
মামা একদিন বিশাল এক লেকচার দিয়া গেলেন বাসায় ‘কি হওয়া যেতে পারে বড় হয়ে’ এই লইয়া । তো, আমি তখন ‘কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার’ হইব বলিয়া চিৎকার করিতে লাগিলাম।
ব্যস,ভাগ্যের কাঁটা ঘোরা শুরু হইল। সৌ/দুর্ভাগ্যক্রমে এই “গণনাযন্ত্রের” উপরই পড়াশুনা করিতে হইতেছে। basically, সেই “চোর” হইবার প্রচেষ্টা কিন্তু ছাড়িতে পারি নাই। ভবিষ্যতে কত্ত বড়, কিংবা কি ধরনের চোর হইব তা বলতে পারি না, তবে এখন আপাতত ‘পড়া চোর’ হইয়া আছি তা বলিতে পারি!!! ”
বিঃ দ্রঃ ইহা কোন উৎসাহমূলক পোস্ট নহে… “ Don’t try this at another home. ”

YOUR NAMEAbout Me
আসসালামু আলাইকুম। নবীন বাংলা ব্লগ সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম। আসলে এই ব্লগ সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এবং আমি এই সাইটের এডমিন, মূলত ব্লগিং প্রাকটিস এবং মুক্ত জ্ঞাণ চর্চার জন্যই এই সাইটটি ওপেন করেছি। আমার সাইটের পোস্টগুলো অন্যান্য সুনাম খ্যাত ব্লগ সাইটে সমূহে পাবলিশ করে থাকি তথারুপ টেকটিউন্স, টিউনারপেইজ। ইনশাআল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব নবীন বাংলা ব্লগে লেখালেখি করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে অন্যান্য লেখকদের বাছাই করা পোস্টগুলো পাবলিশ করা হয়। এবং ইচ্ছা করলে আপনিও এই ব্লগের অতিথি লেখক হিসাবে শুরু করতে পারেন।পরিশেষে আমার সাইট কিংবা প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে কোন আপনাদের অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহন করা হবে। আবারো ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সবাইকে!!
Follow : | | Facebook | Twitter

Post a Comment

 
Top