0
স্কুলের শিক্ষক শ্রেণী কক্ষে জিজ্ঞেস করছেন ছাত্রকে, ‘বিশ্বের তিনটা বিখ্যাত দেয়ালের নাম বলো তো?’ চটপটে ছাত্রের উত্তর, ‘চীনের প্রাচীর, বার্লিন প্রাচীর আর রাহুল দ্রাবিড়।’ দৃশ্যটা হয়তো কল্পনার নির্যাসমাখা, কিন্তু বাস্তবটা আসলেই এমন। সুদৃঢ় রক্ষণের জন্য রাহুল শরদ দ্রাবিড়ের নামটাই হয়ে গিয়েছিল ‘দ্য ওয়াল’। ১৬টা বছর ধরে ঢালের মতো রুখে
এমন নয় যে আচমকা কোনো বিস্ফোরণেই ধসে পড়েছে ‘দেয়াল’, বরং একটু একটু করে অবহেলার গাঁইতি-শাবলের আঘাতে দেয়ালের গা থেকে খসে পড়েছে এক একটি ইট। দুই বছর ওয়ানডে ক্রিকেটের দলে ছিলেন ব্রাত্য, নির্বাচকদের চোখে তখন বিশ্বকাপ জয়ের রঙিন স্বপ্ন। বিশ্বকাপ জয় তো হলো, কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে ঘাসের পিচে খেলতে গিয়েই বের হয়ে এসেছিল তারুণ্যের রংমাখা মুখোশের অন্তরালের কুৎসিত চেহারাটা। শর্ট বলের বিপক্ষে সেই চিরকালীন দুর্বলতা আর আইপিএলের সংক্রমণে বেশি বেশি শট খেলার প্রবণতা। অগত্যা ‘রাহুল শরণ’ এবং টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজেও ভারতীয় দল এক চাকার গাড়ি। ৪০ ছুঁই ছুঁই বয়সেও চেস্টার-লি স্ট্রিট থেকে কার্ডিফ পর্যন্ত সেই জোয়াল কাঁধে নিয়েছিলেন দ্রাবিড়। এরপর দেশের মাটিতে অতীতের ছায়া হয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে পারলেও অস্ট্রেলিয়ানদের বুনো তারুণ্যের সামনে আর পারলেন না দ্রাবিড়। দেশে ফিরে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে, শুক্রবার দুপুরের পর থেকে তাই তাঁর নামের আগেও লিখতে হবে সাবেক ক্রিকেটার!
বেশ কিছুদিন আগের কথা। ব্রায়ান লারা, স্টিভ ওয়াহ তখনো খেলছেন। কলিন ক্রফট অবশ্য খেলা ছেড়েছেন তার আগেই, বল ছেড়ে মাইক্রোফোন হাতে বিবিসি রেডিওর ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষকের ভূমিকায়। ধারাভাষ্য কক্ষেই একজন তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, তোমার জীবন বাঁচানোর জন্য যদি কাউকে ব্যাট করতে বলা হয়, তাহলে তুমি কাকে বেছে নেবে? শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা নাকি স্টিভ ওয়াহ?’ উত্তরে ক্রফট যেটা বলেছিলেন, সেটা আজও উদ্ধৃতি দেন অনেকেই, ‘দেয়ালে যদি পিঠ ঠেকেই যায়, তাহলে আমি বেছে নেব রাহুল দ্রাবিড়কে।’ মোদ্দা কথায় এই হচ্ছেন রাহুল দ্রাবিড়, জীবন দিয়েও যাঁকে ভরসা করা যায়। কখনো একঘেয়ে, কখনো ক্লান্তিহীন, কিন্তু দিনশেষে সব আশা-ভরসার আলো ঘিরে থাকে যাঁকে ঘিরে। তাঁর অবসরের মধ্য দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল একটা দরজা। আধুনিক ক্রিকেট হয়তো তাঁর চেয়েও জনপ্রিয় অনেক ক্রিকেটারের জন্ম দেবে, অনেক মারকুটে ব্যাটসম্যান আসবেন যাঁরা অবলীলায় বলকে পাঠিয়ে দেবেন সীমানার ওপারে। কিন্তু আরেকজন রাহুল দ্রাবিড় হয়তো দেখা যাবে না। কারণ টোয়েন্টি টোয়েন্টি আর ওয়ানডে ক্রিকেটের তোড়জোড়ে সবাই এখন জোরে মারতে চায়, দ্রুত রান করতে চায়। এই পেশিশক্তির চর্চায় ক্রিকেট থেকে যে শুদ্ধতাটুকু বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সেই ধারার সর্বশেষ পথিক হয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন দ্রাবিড়, যাঁর চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর বুক থেকে শেষ ধ্রুপদী ব্যাটসম্যানের নামটাও মুছে গেছে।
দ্রাবিড় হয়তো শিল্পী নন, তাঁর ব্যাটে তুলির আঁচড়ের চেয়ে জ্যামিতির রেখাচিত্রই স্পষ্ট। তার পরেও ব্রায়ান লারা কিংবা শচীন টেন্ডুলকারের চেয়ে তিনি একটা জায়গায় এগিয়ে, সেটা বিশুদ্ধতায়। ক্রিকেট ম্যানুয়ালে একটা শট যেভাবে খেলতে বলা হয়েছে, দ্রাবিড় প্রতিটা শটই সেভাবে খেলেছেন। ক্রিকেট কোচরা নির্দ্বিধায় দ্রাবিড়ের খেলার ফুটেজ চালিয়ে শিষ্যদের বোঝাতে পারেন, ‘কাভার ড্রাইভটা এভাবে খেলতে হয়, সোজা পায়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে হয় এইভাবে।’ এখন অনেক ক্রিকেটার আসছেন, যাঁরা ক্রিকেটে মেশান মুষ্টিযুদ্ধের পাঠ। তাঁদের শরীরী ভাষায়ও থাকে আক্রমণের ঝাঁঝ। তাঁরা হয়তো অনেক নাম কামাবেন, সঙ্গে টাকাও। প্রতিপক্ষের সমীহও হয়তো পাবেন, তবে শ্রদ্ধামেশানো ভালোবাসা? তার জন্য অনেকটা পথ হাঁটতে হয়, আর এ যুগের ক্রিকেটারদের সেই ধৈর্যটাই যেন নেই!
গেছেন প্রতিপক্ষের বাঁধভাঙা আক্রমণ, কিন্তু কখনোই পাননি বীরের সম্মান। আর্যদের আগমনের পর যেমন চাপা পড়ে গেছে দ্রাবিড় সভ্যতার ইতিহাস, তেমনি রাহুল দ্রাবিড়ের মুখ বুজে করে যাওয়া একঘেয়ে পরিশ্রমের ফসলটা দিনশেষে ‘ছিনতাই’ করেছে অন্য কেউ। ৯ নভেম্বরকে বলা হয় বার্লিন দেয়াল পতন দিবস, ৯ মার্চকে কি এখন থেকে ভারতীয় দেয়াল পতন দিবস বলা হবে? এই দিনেই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন রাহুল দ্রাবিড়।
স্কুলের শিক্ষক শ্রেণী কক্ষে জিজ্ঞেস করছেন ছাত্রকে, ‘বিশ্বের তিনটা বিখ্যাত দেয়ালের নাম বলো তো?’ চটপটে ছাত্রের উত্তর, ‘চীনের প্রাচীর, বার্লিন প্রাচীর আর রাহুল দ্রাবিড়।’ দৃশ্যটা হয়তো কল্পনার নির্যাসমাখা, কিন্তু বাস্তবটা আসলেই এমন। সুদৃঢ় রক্ষণের জন্য রাহুল শরদ দ্রাবিড়ের নামটাই হয়ে গিয়েছিল ‘দ্য ওয়াল’। ১৬টা বছর ধরে ঢালের মতো রুখে গেছেন প্রতিপক্ষের বাঁধভাঙা আক্রমণ, কিন্তু কখনোই পাননি বীরের সম্মান। আর্যদের আগমনের পর যেমন চাপা পড়ে গেছে দ্রাবিড় সভ্যতার ইতিহাস, তেমনি রাহুল দ্রাবিড়ের মুখ বুজে করে যাওয়া একঘেয়ে পরিশ্রমের ফসলটা দিনশেষে ‘ছিনতাই’ করেছে অন্য কেউ। ৯ নভেম্বরকে বলা হয় বার্লিন দেয়াল পতন দিবস, ৯ মার্চকে কি এখন থেকে ভারতীয় দেয়াল পতন দিবস বলা হবে? এই দিনেই যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন রাহুল দ্রাবিড়।
এমন নয় যে আচমকা কোনো বিস্ফোরণেই ধসে পড়েছে ‘দেয়াল’, বরং একটু একটু করে অবহেলার গাঁইতি-শাবলের আঘাতে দেয়ালের গা থেকে খসে পড়েছে এক একটি ইট। দুই বছর ওয়ানডে ক্রিকেটের দলে ছিলেন ব্রাত্য, নির্বাচকদের চোখে তখন বিশ্বকাপ জয়ের রঙিন স্বপ্ন। বিশ্বকাপ জয় তো হলো, কিন্তু ইংল্যান্ডের মাটিতে ঘাসের পিচে খেলতে গিয়েই বের হয়ে এসেছিল তারুণ্যের রংমাখা মুখোশের অন্তরালের কুৎসিত চেহারাটা। শর্ট বলের বিপক্ষে সেই চিরকালীন দুর্বলতা আর আইপিএলের সংক্রমণে বেশি বেশি শট খেলার প্রবণতা। অগত্যা ‘রাহুল শরণ’ এবং টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজেও ভারতীয় দল এক চাকার গাড়ি। ৪০ ছুঁই ছুঁই বয়সেও চেস্টার-লি স্ট্রিট থেকে কার্ডিফ পর্যন্ত সেই জোয়াল কাঁধে নিয়েছিলেন দ্রাবিড়। এরপর দেশের মাটিতে অতীতের ছায়া হয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে পারলেও অস্ট্রেলিয়ানদের বুনো তারুণ্যের সামনে আর পারলেন না দ্রাবিড়। দেশে ফিরে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে, শুক্রবার দুপুরের পর থেকে তাই তাঁর নামের আগেও লিখতে হবে সাবেক ক্রিকেটার!
বেশ কিছুদিন আগের কথা। ব্রায়ান লারা, স্টিভ ওয়াহ তখনো খেলছেন। কলিন ক্রফট অবশ্য খেলা ছেড়েছেন তার আগেই, বল ছেড়ে মাইক্রোফোন হাতে বিবিসি রেডিওর ধারাভাষ্যকার ও বিশ্লেষকের ভূমিকায়। ধারাভাষ্য কক্ষেই একজন তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ‘আচ্ছা, তোমার জীবন বাঁচানোর জন্য যদি কাউকে ব্যাট করতে বলা হয়, তাহলে তুমি কাকে বেছে নেবে? শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারা নাকি স্টিভ ওয়াহ?’ উত্তরে ক্রফট যেটা বলেছিলেন, সেটা আজও উদ্ধৃতি দেন অনেকেই, ‘দেয়ালে যদি পিঠ ঠেকেই যায়, তাহলে আমি বেছে নেব রাহুল দ্রাবিড়কে।’ মোদ্দা কথায় এই হচ্ছেন রাহুল দ্রাবিড়, জীবন দিয়েও যাঁকে ভরসা করা যায়। কখনো একঘেয়ে, কখনো ক্লান্তিহীন, কিন্তু দিনশেষে সব আশা-ভরসার আলো ঘিরে থাকে যাঁকে ঘিরে। তাঁর অবসরের মধ্য দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল একটা দরজা। আধুনিক ক্রিকেট হয়তো তাঁর চেয়েও জনপ্রিয় অনেক ক্রিকেটারের জন্ম দেবে, অনেক মারকুটে ব্যাটসম্যান আসবেন যাঁরা অবলীলায় বলকে পাঠিয়ে দেবেন সীমানার ওপারে। কিন্তু আরেকজন রাহুল দ্রাবিড় হয়তো দেখা যাবে না। কারণ টোয়েন্টি টোয়েন্টি আর ওয়ানডে ক্রিকেটের তোড়জোড়ে সবাই এখন জোরে মারতে চায়, দ্রুত রান করতে চায়। এই পেশিশক্তির চর্চায় ক্রিকেট থেকে যে শুদ্ধতাটুকু বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সেই ধারার সর্বশেষ পথিক হয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন দ্রাবিড়, যাঁর চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর বুক থেকে শেষ ধ্রুপদী ব্যাটসম্যানের নামটাও মুছে গেছে।
দ্রাবিড় হয়তো শিল্পী নন, তাঁর ব্যাটে তুলির আঁচড়ের চেয়ে জ্যামিতির রেখাচিত্রই স্পষ্ট। তার পরেও ব্রায়ান লারা কিংবা শচীন টেন্ডুলকারের চেয়ে তিনি একটা জায়গায় এগিয়ে, সেটা বিশুদ্ধতায়। ক্রিকেট ম্যানুয়ালে একটা শট যেভাবে খেলতে বলা হয়েছে, দ্রাবিড় প্রতিটা শটই সেভাবে খেলেছেন। ক্রিকেট কোচরা নির্দ্বিধায় দ্রাবিড়ের খেলার ফুটেজ চালিয়ে শিষ্যদের বোঝাতে পারেন, ‘কাভার ড্রাইভটা এভাবে খেলতে হয়, সোজা পায়ে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে হয় এইভাবে।’ এখন অনেক ক্রিকেটার আসছেন, যাঁরা ক্রিকেটে মেশান মুষ্টিযুদ্ধের পাঠ। তাঁদের শরীরী ভাষায়ও থাকে আক্রমণের ঝাঁঝ। তাঁরা হয়তো অনেক নাম কামাবেন, সঙ্গে টাকাও। প্রতিপক্ষের সমীহও হয়তো পাবেন, তবে শ্রদ্ধামেশানো ভালোবাসা? তার জন্য অনেকটা পথ হাঁটতে হয়, আর এ যুগের ক্রিকেটারদের সেই ধৈর্যটাই যেন নেই!

(কালের কণ্ঠ পত্রিকা হতে সংগৃহিত)

YOUR NAMEAbout Me
আসসালামু আলাইকুম। নবীন বাংলা ব্লগ সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম। আসলে এই ব্লগ সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এবং আমি এই সাইটের এডমিন, মূলত ব্লগিং প্রাকটিস এবং মুক্ত জ্ঞাণ চর্চার জন্যই এই সাইটটি ওপেন করেছি। আমার সাইটের পোস্টগুলো অন্যান্য সুনাম খ্যাত ব্লগ সাইটে সমূহে পাবলিশ করে থাকি তথারুপ টেকটিউন্স, টিউনারপেইজ। ইনশাআল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব নবীন বাংলা ব্লগে লেখালেখি করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে অন্যান্য লেখকদের বাছাই করা পোস্টগুলো পাবলিশ করা হয়। এবং ইচ্ছা করলে আপনিও এই ব্লগের অতিথি লেখক হিসাবে শুরু করতে পারেন।পরিশেষে আমার সাইট কিংবা প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে কোন আপনাদের অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহন করা হবে। আবারো ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সবাইকে!!
Follow : | | Facebook | Twitter

Post a Comment

 
Top