0
(মূল লেখক: মাঈনুল-রাজু, সচালয়তন ব্লগ)
উইলিস টাওয়ার
শিকাগো, আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম শহর। সবচেয়ে বড় শহর নিউ ইয়র্ক; যেখানে স্থানীয়দের চেয়ে ইমিগ্র্যান্ট বেশি, তার চেয়েও বেশি ট্যাক্সি ক্যাব। ওদিকে, দ্বিতীয় বৃহত্তম লস এঞ্জেলেস চলে গেছে সেলিব্রিটিদের দখলে। সেখানে হলিউডের খ্যাতির ভারে চাপা পড়ে গেছে আমেরিকানদের কার্যকলাপ, জীবন-যাপন। অতএব, কারো কারো মতে, শিকাগোই হলো সর্ববৃহৎ নির্ভেজাল আমেরিকান শহর।


এই শহরে অস্থিরতা নেই, ধীরস্থিরতা আছে; আলোড়ন নেই, আয়োজন আছে; জৌলুসের অদম্য প্রদর্শন নেই, সুরুচির সুরম্য নিদর্শন আছে। পুরো শহরটাই যেন স্থাপত্যকলার সুবিশাল এক জাদুঘর। অনিন্দ্য নকশায়, অনন্য পরিকল্পনায়, জগদ্বিখ্যাত সব স্থ্পতি, প্রকৌশলিরা তাদের বিন্দু বিন্দু মেধা ঢেলে দিয়ে গড়ে তুলেছেন আধুনিক এই শহর।

রিভার শিকাগোর তীর ঘেঁষে উইলিস টাওয়ার, আসপাশের সত্তর আশি তলার ভবনগুলোও যার ছায়ায় ঢেকে গেছে

ঢেউ ভবন

পতাকা লাগানো এই ভবন এবং আশপাশেই করা হয় ট্রান্সফর্মার-৩ মুভ্যির শুটিং। মেকিং দেখতে পাবেন এখানেঃ http://www.youtube.com/watch?v=0MqGHJSZ3rk

ভূট্টা বিল্ডিং, গাড়ী পার্কিং এর জন্য বিশেষভাবে নির্মিত


শিকাগোর দৃষ্টিনন্দন ভবনগুলো
এখানকার সর্বোচ্চ টাওয়ার উইলিস। আগে সুপরিচিত ছিলো সিয়ার্স টাওয়ার নামে। ১৯৭৩ সালে তৈরী হওয়া এই ভবনটির ডিজাইনার বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশী ফজলুর রহমান খান। তাঁকে বলা হয়ে থাকে টিউবুলার ডিজাইনের জনক। তাঁর দেখানো পথেই সারাবিশ্বজুড়ে আজও নির্মিত হয় উঁচু উঁচু সব স্থাপনা। শিকাগোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জন হ্যানকক সেন্টারের ডিজাইনারও তিনি।

ইউনিভার্সিটি অভ ইলিনয় অ্যাট শিকাগো ক্যাম্পাস রোড
সৌন্দর্যের এই নগরীর রূপ লাবণ্য আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে পাশে থাকা লেইক মিশিগান। লেইক মিশিগানের সুনীল জলরাশি, সে-জলে বিশুদ্ধ সে-শহরের স্বপ্নীল প্রতিচ্ছবি দেখার জন্য আমেরিকা এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ।






লেইক মিশিগানের তীরের নির্ভেজাল শিকাগো
শহরটি জনপ্রিয় কিংবা জনবহুল হয়ে উঠার আরো একটি কারণ হলো, গোটা আমেরিকায় শহরটির অবস্থান। নিউ ইয়র্ক এবং লস এঞ্জেলেস যথাক্রমে আমেরিকার পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। তাই, অভ্যন্তরভাগে শিকাগোই হয়ে উঠে সকল যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু। শহরটির এত এত বিশেষ এবং তাৎপর্যপূর্ণ দিক আছে যে, সেগুলোর প্রতিটি নিয়ে আলাদা আলাদা করে পর্ব লেখা যায়। শিল্প-সংস্কৃতি, সঙ্গীত- স্থাপত্য সব দিক থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্টে অনন্য এই শহর।





আমোদপ্রিয় শিকাগোর মানুষজন
তবে, সে-সব বৈশিষ্ট্যের চেয়ে কিছুটা আলাদা ধরণের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্যেও অলংকৃত হয়ে আছে শিকাগো। অলংকৃত না বলে কলঙ্কিত বলাই ভালো। বিশ্বখ্যাত মাফিয়া আর গ্যাংলিডারদের স্বর্গরাজ্য এই শিকাগো। একদা এই শহরে বসেই গোটা আমেরিকায় অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেছিলো আল কাপোনে কিংবা জন ডিলিঞ্জারের মত কুখ্যাত অপরাধীরা। তাদের কথা আজ বাকী থাক, অন্য কোনো লেখায় বলা যাবে। আজ বরং বলা যাক অন্য এক পেশাজীবিদের কথা। যেখানে অপরাধ আছে, সেখানে অপরাধের বিচারও আছে; যেখানে বিচার আছে, সেখানে আছে আদালত; আর যেখানে আছে আদালত, সেখানেই আছে আইনজীবি।





রাতের শিকাগো
শিকাগো শহরে আইনজীবিদের অবস্থান বিলবোর্ডে, রীতিমতো মডেল। নগর কর্তৃপক্ষ গর্বের সাথে বিজ্ঞাপণ দিয়ে রেখেছে- এই সেই শিকাগো, যার রয়েছে বিশ্ববরেণ্য আইনজীবি সৃষ্টি করার সুদীর্ঘ ইতিহাস। অবশ্য, সেই আইনজীবিদের দু-একজনের নাম বললে ব্যাপারটা মোটেও বাড়াবাড়ি মনে হবে না। আব্রাহাম লিঙ্কন কিংবা বারাক ওবামা সে-রকমই দুজন শিকাগো কেন্দ্রিক আইনজীবির নাম।

নিউ ইয়ারের ফায়ার ওয়ার্কস
ওদিকে, বছর জুড়েই শহরে চলছে কোনো না কোনো উৎসব। একেবারে যদি কিছু নাও থাকে, তাহলেও নিদেনপক্ষে কোনো স্ট্রিট ব্লক করে হলিউড সিনেমার শুটিং থাকবে। প্যারাট্রুপার আর পাইলটদেরর সৌজন্যে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে থাকে “এয়ার-ওয়াটার শো”। বিমান এবং আকাশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সে-এক বাহারী আয়োজন।

এয়ার-ওয়াটার শো দেখতে আসা মানুষের ভীড়

এয়ার শো
এদিকে, বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে মন মাতানো বর্ণিল সমাবেশ আর হুল্লোড়তো থাকছেই। সবুজ রংঙে রাঙ্গানো “সেইন্ট প্যাট্রিকস্ ডে” এর মত বিশেষ দিনে গোটা শিকাগো জুড়ে হয়ে উঠে সবুজে মাতোয়ারা। সবুজের সাথে তাল মেলাতে পুরো একটা নদীকে সবুজ রঙে রাঙ্গিয়ে দেয়ার খেয়ালিপনা বোধ করি শিকাগোর মত শহরগুলিতেই দেখানো সম্ভব।




সেইন্ট প্যাট্রিকস্ ডে এর উৎসবে
মূল শহর অর্থাৎ ডাউনটাউনের সৌন্দর্য এক ধরণের। সেখানে অবশ্য অতি বেশি আধুনিকতা, অতি বেশি ইট-পাথরের উপস্থিতি। তাই, শিকাগোবাসীরা দিনের বেলায় ডাউনটাউনে অফিসের কাজকর্ম শেষে, সন্ধ্যায় সাবার্বের (শহরতলী) বাসায় পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যেতেই পছন্দ করেন।



শহরের আইকন শিকাগো বিন এবং শহরের ভেতরেই থাকা পার্ক
সুবিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত শিকাগোর সাবার্ব। এক পাশের লেইক মিশিগান বাদ দিয়ে, অন্য যে কোনো দিকে, এক-দেড়ঘন্টা টানা ড্রাইভ করে গেলেও শেষ হবে না সাবার্ব। ঢাকা শহরের এক ঘন্টা ড্রাইভ করে হয়তো শাহবাগ থেকে ফার্মগেইট যাওয়া যাবে। কিন্তু, এখানে এক ঘণ্টার ড্রাইভ মানে সুদীর্ঘ দূরত্ব। সাবার্বের সৌন্দর্যও আবার আরেক ধরণের। যে দিকেই গেছি, মনে হয়েছে এত সুবিস্তৃত অঞ্চল কিভাবে এরা এমন ছবির মত করে সাজিয়ে রেখেছে। মনে হয়, কেউ বুঝি রংতুলি দিয়ে সাবার্বগুলোর ডিজাইন এঁকে দিয়েছে, তারপর ঠিক সেভাবেই তৈরী হয়ে গেছে বাড়ী-ঘরগুলো।




শিকাগো সাবার্ব
আমেরিকার একেকটা শহর একেক রকম। শহরে শহরে কিছু মিল আছে, আছে কিছু অমিলও। শহরভেদে মানুষগুলি আচার-আচরণে, রীতি-নীতিতে ফারাক থাকে। ছোট শহরগুলোতে রাস্তার ওপাশ থেকেও মানুষ জন হাই-হ্যালো-গুড মর্নিং বলে; বড় শহরগুলোতে সেটা হবার সুযোগ নেই- অনেক মানুষ, সবাই ব্যস্ত, কোনো না কোনো উদ্দেশ্যে ছুটে চলছে। তবে, শিকাগো শহরে দেখেছি, পরিচিত হোক আর অপরিচিত হোক; কথা না বলতে পারুক, চোখে চোখ পড়লে, অন্তত মিষ্টি করে একটা হাসি আপনাকে উপহার দেবে। মিষ্টি হাসির শহর শিকাগো।

YOUR NAMEAbout Me
আসসালামু আলাইকুম। নবীন বাংলা ব্লগ সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম। আসলে এই ব্লগ সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এবং আমি এই সাইটের এডমিন, মূলত ব্লগিং প্রাকটিস এবং মুক্ত জ্ঞাণ চর্চার জন্যই এই সাইটটি ওপেন করেছি। আমার সাইটের পোস্টগুলো অন্যান্য সুনাম খ্যাত ব্লগ সাইটে সমূহে পাবলিশ করে থাকি তথারুপ টেকটিউন্স, টিউনারপেইজ। ইনশাআল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব নবীন বাংলা ব্লগে লেখালেখি করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে অন্যান্য লেখকদের বাছাই করা পোস্টগুলো পাবলিশ করা হয়। এবং ইচ্ছা করলে আপনিও এই ব্লগের অতিথি লেখক হিসাবে শুরু করতে পারেন।পরিশেষে আমার সাইট কিংবা প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে কোন আপনাদের অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহন করা হবে। আবারো ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সবাইকে!!
Follow : | | Facebook | Twitter

Post a Comment

 
Top