ক্রিকেট খেলা দেখার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা (১৯৯৬-২০১২) থেকে আমি প্রতিটি দেশের টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টিতে আমার পছন্দের সেরা একাদশ নির্বাচন করছি। `আমার দেখা ক্রিকেট দলগুলোর সেরা একাদশ` এ প্রথমেই দৃষ্টিপাত ক্রিকেটের পুরনোতম সংস্করণ টেস্ট ক্রিকেটের দিকে। টেস্ট খেলুড়ে দশটি দলের সেরা একাদশ বাছাই শেষে এ সময়ের সেরা বিশ্ব একাদশ নির্বাচন শেষে টেস্ট ক্রিকেটে দলগুলোর অবস্থানের আলোকে একাদশগুলো সাজানো হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা:
স্পিনার হিসেবে নিকি বোয়ে, পল হ্যারিসকে টপকে চায়নাম্যান এ্যাডামস স্থান পেয়েছেন। পেসার হিসেবে ডোনাল্ড অটোমেটিক চয়েস। প্রায় চারশত উইকেট পাওয়া এনটিনিকে বাইরে রেখে জেনুইন ম্যাচ উইনার স্টেইনকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কষ্টসাধ্য ছিল না!
ওপেনিংয়ে গিবসের চেয়ে ব্যাটিং রেকর্ড ভাল হওয়ায় প্রোটিয়াসদের সেরা দলে কারস্টেন স্মিথের সঙ্গী। মিডল অর্ডারে ডারিল কালিনানকে বাদ দিয়ে ক্রনিয়ের নাম দেখে অনেকে চমকে উঠবেন। কিন্তু কালে ভদ্রে উঠে আসা স্পিনারদের থেকে দলে স্থান পাওয়া এ্যাডামসের সাথে পার্টটাইমার হিসেবে বোলিং করার জন্য তার চেয়ে ভাল বিকল্প যে নেই! ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং ও অধিনায়কত্ব মিলিয়ে বিমান দূর্ঘটনায় নিহত হওয়া এ সাবেক অধিনায়কই আমার একাদশের একজন সদস্য। এছাড়া এ্যাশওয়েল প্রিন্সের কথাও ভেবেছি।
আমার দেখা দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২) : ১. গ্রায়েম স্মিথ (অধিনায়ক) ২. গ্যারী কারস্টেন ৩. হাশিম আমলা ৪. জ্যাক ক্যালিস ৫. হ্যান্সি ক্রনিয়ে ৬. এবি ডি ভিলিয়ার্স ৭. মার্ক বাউচার (উইকেটরক্ষক) ৮. শন পোলক ৯. পল এ্যাডামস ১০. ডালে স্টেইন ১১. এ্যালান ডোনাল্ড
ইংল্যাণ্ড:
ইংল্যাণ্ডের পেসত্রয়ী বাছাই করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলাম! এন্ড্রু ক্যাডিক, ম্যাথু হগার্ড কোন অংশে হার্মিসন, গফের চেয়ে কম যান না। গফ নিয়ণ্ত্রিত বোলিং ও তূলনামূলক ভাল রেকর্ডের জন্য বাকিদের চেয়ে এগিয়ে থেকে একাদশে স্থান পেয়েছেন। হার্মিসনের পেস ও ম্যাচের মোড়ঘুরানো স্পেলসমূহের জন্য দলে জায়গা পাওয়া। বর্তমান সময়ে ইংলিশ পেস এ্যাটাকের নেতৃত্ব দেওয়া এ্যাণ্ডারসন অটোমেটিক চয়েস! স্টুয়ার্ট ব্রডের বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট করার দক্ষতা থাকায় তাকে নিয়েও ভাবতে হয়েছে। স্পিনার হিসেবে মন্টি পানেসার ও এ্যাশলি জাইলস প্রাথমিক বিবেচনায় থাকলেও সোয়ান তাদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। মিডল অর্ডারে থর্পের সাথে পল কলিংউড প্রাথমিক বিবেচনায় ছিলেন। দল নির্বাচনে অধিনায়কসহ প্রথম তিনটি স্থান নির্বাচন করতে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে। ম্যাট প্রায়রকে উইকেটরক্ষক হিসেবে নিলে হয়তো সমস্যা কিছু কমত। কিন্তু ইংলিশ টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্টকে কেউ বাদ দিবেন বলে মনে হয় না। অধিনায়ক হিসেবে দুই সফল নেতা ভন ও স্ট্রাউস বিবেচনায় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়ক ভন জায়গা পেয়েছেন। তিনে ভনের সাথে দৌঁড়ে জোনাথান ট্রট ও নাসের হুসেইনও ছিলেন। ক্যারিয়ারে ৪৫ টেস্টে ওপেন করা স্টুয়ার্ট ওপেনিংয়ে সফল বলে বাকি একটি স্থানের জন্য মাইকেল আথারটন, এন্ড্রু স্ট্রাউস, এ্যালিস্টার কুক ও মার্কাস ট্রেসকোথিক বিবেচনায় ছিলেন। কুক না ট্রোসকোথিক ভাবতে ভাবতে মারমুখী ট্রোসকোথিককেই প্রাধান্য দিলাম!
আমার দেখা ইংল্যাণ্ডের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. মার্কাস ট্রেসকোথিক ০২. এ্যালেক স্টুয়ার্ট (উইকেটরক্ষক) ০৩. মাইকেল ভন (অধিনায়ক) ০৪. কেভিন পিটারসেন ০৫. গ্রাহাম থর্প ০৬. ইয়ান বেল ০৭. এণ্ড্রু ফ্লিনটফ ০৮. গ্রায়েম সোয়ান ০৯. জেমস এ্যাণ্ডারসন ১০. স্টিভ হার্মিসন ১১. ড্যারেন গফ
অস্ট্রেলিয়া:
টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার নিরঙ্কুশ আধিপত্যের এক দশক দেখার সৌভাগ্য হওয়ায় সেরা একাদশ বাছাই করতে গিয়ে অনেক ভাবতে হয়েছে। ভাগ্যিস বোর্ডারের খেলা দেখা হয় নি! বুনও অবসর নেন ৯৬ সালে। তারপরেও সাবেক অধিনায়ক মার্ক টেলর, বর্তমান অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ও ইয়ান হিলির মত খেলোয়াড়দের একাদশের বাইরে রাখতে হয়েছে। বোলারদের মধ্যে গিলেস্পিকে বাইরে রাখা কঠিনই ছিল। তবে দলের এ্যাটাকে বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে জনসনকে প্রাধান্য দিতে হয়েছে। পেস নির্ভর অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয় স্পিনারের কথা ভাবাও যে পাপ তাই ম্যাকগিলের কথা মনে পড়লেও তাকে নিয়ে বেশিদূর ভাবতে পারি নি!
আমার দেখা অস্ট্রেলিয়ার সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২) : ০১. ম্যাথু হেইডেন ০২. জাস্টিন ল্যাঙ্গার ০৩. রিকি পন্টিং ০৪. মার্ক ওয়াহ ০৫. স্টিভ ওয়াহ (অধিনায়ক) ০৬. মাইক হাসি ০৭. এ্যাডাম গিলক্রিষ্ট (উইকেটরক্ষক) ০৮. শেন ওয়ার্ন ০৯. ব্রেট লী ১০. মিচেল জনসন ১১. গ্লেন ম্যাকগ্রাথ
পাকিস্তান:
ওপেনার হিসেবে আনোয়ারের সঙ্গী খুঁজতে গিয়ে ভালমানের কাউকে পাই নি! তৌফিক উমর, রমিজ রাজা ও হাফিজের চেয়ে আমির সোহেলকেই যোগ্য মনে হয়েছে। মিডল অর্ডারে ইজাজ আহমেদের কথা ভাবলেও তারকা ব্যাটসম্যানদের কারণে একাদশে এ ব্যাটসম্যানের স্থান হয় নি। ছয়ে মিসবাহ-উল-হকের কথা অনেকে হয়তো ভাববেন কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে মিসবাহ পাঁচে ব্যাট করেন! উইকেটরক্ষক হিসেবে মঈন খান, রশিদ লতিফদের রেখে কামরানকে নেওয়াটা কঠিন হলেও তার ব্যাটিং সামর্থ্যের কথা ও দুই শতাধিক ডিসমিসালের কথা কারও অজানা নয়! স্পিনার হিসেবে আজমলের সাথে সাকলাইন মুস্তাক, দানিশ কানেরিয়া, মুস্তাক আহমেদের নাম বিবেচনায় আসে। আজমলের অসাধারণ নৈপূণ্যের কারণে আমার বিবেচনায় একমাত্র স্পিনার হিসেবে উঠে এসেছে তার নাম। উমর গুল, মোহাম্মদ আসিফ ও শোয়েব আকতার তৃতীয় পেসার হিসেবে প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। গতি, গড়, স্ট্রাইক রেট দিয়ে শোয়েব দলে জায়গা করে নিলেও যদি আসিফ নিষিদ্ধ না হয়ে এখনো খেলতেন একাদশটা অন্যরকম হত!
আমার দেখা পাকিস্তানের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. সাঈদ আনোয়ার ০২. আমির সোহেল ০৩. ইউনিস খান ০৪. ইনজামাম-উল-হক ০৫. মোহাম্মদ ইউসুফ ০৬. সেলিম মালিক ০৭. কামরান আকমল (উইকেটরক্ষক) ০৮. ওয়াসিম আকরাম (অধিনায়ক) ০৯. শোয়েব আকতার ১০. সাঈদ আজমল ১১. ওয়াকার ইউনিস
ভারত:
ভারতের টেস্ট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির পরিবর্তে আরেক সফল অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহার উদ্দিনের অন্তভূক্তিটা সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও এ কথা মানতেই হবে আজহারের সমসাময়িক টেস্ট অধিনায়কদের মধ্যে মাইকেল আথারটন, স্টিভেন ফ্লেমিং ও অর্জুনা রানাতুঙ্গারা থাকা সত্ত্বেও মার্ক টেলর, হ্যান্সি ক্রনিয়ের সাথেই সফল অধিনায়ক হিসেবে উচ্চারিত হত আজহারের নাম। মনসুর আলী খান পতৌদি, গাভাস্কার, কপিলের পরের দুই যুগের ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। আজহারের ভারত, সৌরভের `টিম ইণ্ডিয়া` ও ধোনির সফল ভারত। ভারত যে টেস্ট ক্রিকেটে এক সময় শীর্ষে উঠল তার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় আজহারের আমলে! স্বভাবসুলভ অধিনায়কোচিত মনোভাব, চমৎকার ব্যাটিং স্টাইল ও চোখ ধাঁধানো সব স্ট্রোক খেলে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ক্রিকেটার। এছাড়া নভোজিৎ সিং সিধু ও ভেংকটেশ প্রাসাদ হয়তো কারো কারো সেরা একাদশে স্থান পেতে পারেন।
আমার দেখা ভারতের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২) : ০১. বীরেন্দর শেহওয়াগ ০২. গৌতম গাম্ভীর ০৩. রাহুল দ্রাবিড় ০৪. শচীন টেণ্ডুলকার ০৫. মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন ০৬. ভিভিএস লক্ষ্মণ ০৭. মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক) ০৮. অনিল কুম্বলে ০৯. হরভজন সিং ১০. জহির খান ১১. জাভাগাল শ্রীনাথ
শ্রীলঙ্কা:
শ্রীলঙ্কার সেরা একাদশ বাছাই করতে গিয়ে ওপেনিংয়ে দিলশানকে বাইরে রাখতে একটু ভাবতে হয়েছে। আতাপাত্তুর মতো টেস্ট ব্যাটসম্যানকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। জয়সুরিয়ার ব্যাটিং রেকর্ডের সাথে ৯৮ উইকেট, দিলশানের সুযোগকে সীমিত করেছে। তবে যখন দিলশান অবসর নিবেন ততদিনে দুই ওপেনারের যে কোন একজনকে পেছনে ফেলে তখনকার সেরা একাদশে জায়গা পেলেও পেতে পারেন! সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটা থিলান সামারাবীরাকে তালিকার বাইরে রাখার মধ্য দিয়ে নিতে হয়েছে। লঙ্কান উত্থানের নায়ক ও বুদ্ধিমান অধিনায়ক রানাতুঙ্গার ক্যারিয়ার গড় সামারাবীরার চেয়ে অনেক কম হলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় মূল একাদশে স্থান পেয়েছেন। অরবিন্দ একজন চৌকস মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। দলে পাঁচজন বোলারককে স্থান দিতে গিয়ে পঞ্চাশোর্ধ গড়ে রান করা থিলানকে দলে রাখা যায় নি! উইকেটরক্ষক হিসেবে সাঙ্গাকারাকে না নিয়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিলে সাবেক অধিনায়ক হাসান তিলেকরত্মেই স্থান পেতেন। মুরালির সাথে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে অজন্তা মেন্ডিসকে টপকে হেরাথ স্থান পেয়েছেন। ভাস উত্তর মালিঙ্গা ছাড়া ভালমানের পেসার না আসায় অভিজ্ঞতা ও পেসকে প্রাধান্য দিয়ে তৃতীয় পেসার হিসেবে দিলহারাকে নেওয়া হয়েছে। রোশান মহানামাও আমার ভাবনায় এসেছিলেন!
আমার দেখা শ্রীলঙ্কার সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২) : ১. সনাথ জয়সুরিয়া ২. মারভান আতাপাত্তু ৩. কুমার সাঙ্গাকারা (উইকেটরক্ষক) ৪. অরবিন্দ ডি সিলভা ৫. মাহেলা জয়াবর্ধনে ৬. অর্জুনা রানাতুঙ্গা (অধিনায়ক) ৭. চামিন্দা ভাস ৮. রঙ্গনা হেরাথ ৯. লাসিথ মালিঙ্গা ১০. দিলহারা ফার্নাণ্ডো ১১. মুত্তিয়া মুরালিধরন
ওয়েস্ট ইণ্ডিজ:
দূর্ধর্ষ ওয়েস্ট ইণ্ডিজের খেলা দেখা হয়নি বলে সেরা একাদশ বাছাই করতে তেমন সমস্যায় পড়ি নি। দলে তৃতীয়য় পেসার হিসেবে কেমার রোচ, ফিদেল এডওয়ার্ডস ও বিশপের মাঝে বিশপকেই মনে ধরেছে। উইকেটরক্ষক হিসেবে দিনেশ রামদিন ও জে আর মারেকে পিছনে ফেলে জ্যাকব হয়েছেন মনোনীত। ওপেনিংয়ে ক্যাম্পবেলের সাথে হাইণ্ডস ও গঙ্গা প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। মিডল অর্ডারে জিমি এ্যাডামসের জায়গা না হলেও ওয়েস্ট ইণ্ডিজ দলে ভাল কোন স্পিনার না থাকায় হুপার, গেইলের সাথে পার্টটাইমার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন। স্পেশালিষ্ট স্পিনার হিসেবে সুলেমন বেন প্রাথমিক ভাবনায় ছিলেন!
আমার দেখা ওয়েস্ট ইণ্ডিজের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. ক্রিস গেইল ০২. শেরউইন ক্যাম্পবেল ০৩. রামনরেশ সারওয়ান ০৪. ব্রায়ান লারা ০৫. শিবনারায়ণ চন্দরপল ০৬. কার্ল হুপার ০৭. জিমি এ্যাডামস ০৮. রিডলী জ্যাকবস (উইকেটরক্ষক) ০৯. ইয়ান বিশপ ১০. কোর্টনি ওয়ালশ (অধিনায়ক) ১১. কার্টলি আমব্রোস
নিউজিল্যাণ্ড:
ব্ল্যাক ক্যাপসদের ওপেনিংয়ে ইয়াং, গাপটিল, রাইডারকে রিচার্ডসনের সঙ্গী হিসেবে প্রাথমিক বিবেচনায় রাখলেও টেস্টে তাদের রেকর্ড ভাল না হওয়ায় ও সেরা দল গঠনের স্বার্থে ম্যাককুলাম ওপেনিংয়ে স্থান দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য এ্যাডাম প্যারোরেকে পিছনে ফেলে জায়গা পাওয়া এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লেইট মিডল অর্ডারেই অধিক সফল। অলরাউণ্ডার হিসেবে কেয়ার্নসের পাশাপাশি ওরামও ভাবনায় ছিলেন। স্পিন ও পেস এ্যাটাকে নির্বাচিতদের বাইরে তেমন ভাল বিকল্প ছিল না।
আমার দেখা নিউজিল্যাণ্ডের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. মার্ক রিচার্ডসন ০২. ব্রেণ্ডন ম্যাককুলাম (উইকেটরক্ষক) ০৩. স্টিফেন ফ্লেমিং (অধিনায়ক) ০৪. রস টেলর ০৫. নাথান এ্যাস্টলে ০৬. ক্রেইগ ম্যাকমিলান ০৭. ক্রিস কেয়ার্নস ০৮. ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ০৯. শেন বণ্ড ১০. ড্যানি মরিসন ১১. ক্রিস মার্টিন
বাংলাদেশ:
বাংলাদেশ দলে ওপেনার হিসেবে নাফিস, জুনায়েদ প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। মিডল অর্ডারে রাজিন সালেহ, অলক কাপালি, মাহমুদ উল্লাহ প্রমুখ প্রাথমিক ভাবনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মূল দলে জায়গা পান নি। উইকেটরক্ষক হিসেবে মুশফিককে পেছনে ফেলে তালিকায় স্থান পেয়েছেন খালেদ মাসুদ। খালেদ মাহমুদ ও তাপস বৈশ্যের কথাও প্রাথমিক বিবেচনায় যথাক্রমে অলরাউণ্ডার ও পেসার হিসেবে এসেছিল।
আমার দেখা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা টেস্ট একাদশ (২০০০-২০১২): ০১. জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু ০২.তামিম ইকবাল ০৩. হাবিবুল বাশার সুমন (অধিনায়ক) ০৪. আমিনুল ইসলাম বুলবুল ০৫. মোহাম্মদ আশরাফুল ০৬. সাকিব আল হাসান ০৭. খালেদ মাসুদ পাইলট (উইকেটরক্ষক) ০৮. মোহাম্মদ রফিক ০৯. মাশরাফি বিন মর্তুজা ১০. এনামুল হক জুনিয়র ১১. মন্জুরুল ইসলাম।
জিম্বাবুয়ে:
জিম্বাবুয়ের দল নির্বাচন করতে গিয়ে গ্রাণ্টের সঙ্গী হিসেবে ত্রিশ গড়ধারী অভিজ্ঞ ওপেনার পাচ্ছিলাম না। মিডল অর্ডারে মারে গুডউইন, স্টুয়ার্ট কার্লাইল, টাইবু, ক্রেইগ হুইশার্ট, মাসাকাদজা প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। ব্রেণ্ডন টেলর ও নীল জনসনের কথা মনে পড়লেও একাদশে তাদের ঠাঁই হয় নি।
আমার দেখা জিম্বাবুয়ের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. গ্রাণ্ট ফ্লাওয়ার ০২. গ্যাভিন রেনি ০৩. এ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল ০৪. ডেভ হফটন ০৫. এ্যাণ্ডি ফ্লাওয়ার (উইকেটরক্ষক) ০৬. গাই হুইটাল ০৭. হিথ স্ট্রিক (অধিনায়ক) ০৮. পল স্ট্র্যাং ০৯. এণ্ডি ব্লিগনট ১০. রেমণ্ড প্রাইস ১১. হেনরি ওলঙ্গা
বিশ্বসেরা টেস্ট টিম:
প্রায় দেড় যুগে (১৯৯৬-২০১২) ক্রিকেট বিশ্ব অনেক বিশ্বমানের টেস্ট ক্রিকেটারের আবির্ভাব ও সেরা পারফরম্যান্সগুলো দেখেছে। আমিও বেশ কিছু নান্দনিক ইনিংস ও মহাকাব্য দেখেছি যেমন দেখেছি আগুন ঝরানো বোলিং, ঘূর্ণিবলের জাদু। এ সময়ে খেলা খেলোয়াড়দের থেকে সেরা এগার নির্বাচনও তাই কষ্টসাধ্য। এ সময়ের সেরা দল গঠন করতে গিয়ে ওপেনিংয়ে আমার প্রাথমিক বিবেচনায় ছিলেন গ্রায়েম স্মিথ, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, হেইডেন, শেহওয়াগ, আতাপাত্তু ও গেইল। বিদেশের মাটিতে গড় কমে যাওয়া ও দলীয় দ্বিতীয় ইনিংসে প্রায়শ:ই ব্যর্থতা শেহওয়াগকে ঠেলে দিয়েছে ব্যাকফুটে, গড় বুমেরাং হয়েছে গেইল, আতাপাত্তুর জন্য। ল্যাঙ্গার কাছাকাছি থাকলেও স্মিথকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন নি। ওয়ান ডাউনে হাশিম আমলা, রিকি পন্টিং, রাহুল দ্রাবিড়, কুমারর সাঙ্গাকারার মাঝে শেষের তিনজন ক্রিকেট গ্রেট। কেউ কারও চেয়ে কম নন। ক্ল্যাসিক ব্যাটিংয়ের জন্য `দ্যা ওয়াল` ও সাঙ্গার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। পান্টার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল একজন অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান। আমলা নির্ভরতার প্রতীক। সাঙ্গাকারা দ্রাবিড়কে টপকে পেয়েছেন দলে ঠাঁই (ব্যাটসম্যান হিসেবে)। চারে ব্যাটিং জিনিয়াস শচীন, ক্যারিবীয় ক্রিকেটের গর্ব কিংবদন্তী লারা, ক্যালিস, ক্রাইসিসম্যান ইনজামামুল হক ও ইংলিশ তারকা কেভিন পিটারসেন প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। জ্যাককে মূলত অলরাউণ্ডার ক্যাটেগরির জন্য ভাবা হলেও শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে লারা, শচীন, ইনজিদের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। অনেক হিসেব নিকাশ শেষে লারাকে হটিয়ে শচীনকে জায়গা দেওয়ায় কারো আপত্তি থাকার কথা নয়! মিডল অর্ডারের বাকি স্থানটির জন্য স্টিভ ওয়াহ, মাইক হাসি, জয়াবর্ধনে, লক্ষ্মণ, চন্দরপল, মোহাম্মদ ইউসুফ বিবেচনায় ছিলেন। স্টিভ ওয়াহ অধিনায়কত্বে সফলতার কারণে আমার বিবেচনায় বাকিদের চেয়ে এগিয়ে। অলরাউণ্ডার হিসেবে ক্রিস কেয়ার্নস, কার্ল হুপার, শন পোলক, এণ্ড্রু ফ্লিনটফরা প্রাথমিকভাবে থাকলেও নিশ্চিন্তে ক্যালিসকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। উইকেটরক্ষক হিসেবে বাউচার, এণ্ডি ফ্লাওয়ার ও স্টুয়ার্টকে রেখে কিংবদন্তী উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান গিলিকে নেওয়া ছিল সবচেয়ে সহজতম সিদ্ধান্তগুলোর একটি। এক স্পিনার নাকি দুই স্পিনার ভাবতে গিয়ে দুইজনকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ভেট্টোরি, সোয়ান, আজমল, ওয়ার্ন, সাকলাইন, কুম্বলে, হরভজন, মুরালিধরনদের মাঝে শেন ওয়ার্ন ও মুরালিধরন অটোমেটিক চয়েস। তবে এক স্পিনার নিলে আমার দলে শেন ওয়ার্নের জায়গা হত! ম্যাকগ্রাথ, ওয়ালশ, আমব্রোস, ওয়াকার, ডোনাল্ড, স্টেইন, বণ্ড, ওয়াসিমদের থেকে দু পেসার বাছাই করাটা খুবই কঠিন কাজ। ওয়াসিম ও ম্যাকগ্রাথকে দলে নিয়ে সেই কঠিন কাজটিও শেষ করতে হল। তিন পেসার নিলে আমব্রোস, ডোনালড, ওয়াকার ও স্টেইনের মাঝে কাকে নিতাম সেটা না হয় রহস্য হয়েই থাক!
আমার দেখা বিশ্বসেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. ম্যাথু হেইডেন ০২. গ্রায়েম স্মিথ ০৩. কুমার সাঙ্গাকারা ০৪. শচীন টেণ্ডুলকার ০৫. স্টিভ ওয়াহ (অধিনায়ক) ০৬. জ্যাক ক্যালিস ০৭. এ্যাডাম গিলক্রিষ্ট (উইকেটরক্ষক) ০৮. ওয়াসিম আকরাম ০৯. শেন ওয়ার্ন ১০. মুত্তিয়া মুরালিধরন ১১. গ্লেন ম্যাকগ্রাথ।
দক্ষিণ আফ্রিকা:
স্পিনার হিসেবে নিকি বোয়ে, পল হ্যারিসকে টপকে চায়নাম্যান এ্যাডামস স্থান পেয়েছেন। পেসার হিসেবে ডোনাল্ড অটোমেটিক চয়েস। প্রায় চারশত উইকেট পাওয়া এনটিনিকে বাইরে রেখে জেনুইন ম্যাচ উইনার স্টেইনকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কষ্টসাধ্য ছিল না!
ওপেনিংয়ে গিবসের চেয়ে ব্যাটিং রেকর্ড ভাল হওয়ায় প্রোটিয়াসদের সেরা দলে কারস্টেন স্মিথের সঙ্গী। মিডল অর্ডারে ডারিল কালিনানকে বাদ দিয়ে ক্রনিয়ের নাম দেখে অনেকে চমকে উঠবেন। কিন্তু কালে ভদ্রে উঠে আসা স্পিনারদের থেকে দলে স্থান পাওয়া এ্যাডামসের সাথে পার্টটাইমার হিসেবে বোলিং করার জন্য তার চেয়ে ভাল বিকল্প যে নেই! ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং ও অধিনায়কত্ব মিলিয়ে বিমান দূর্ঘটনায় নিহত হওয়া এ সাবেক অধিনায়কই আমার একাদশের একজন সদস্য। এছাড়া এ্যাশওয়েল প্রিন্সের কথাও ভেবেছি।
আমার দেখা দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২) : ১. গ্রায়েম স্মিথ (অধিনায়ক) ২. গ্যারী কারস্টেন ৩. হাশিম আমলা ৪. জ্যাক ক্যালিস ৫. হ্যান্সি ক্রনিয়ে ৬. এবি ডি ভিলিয়ার্স ৭. মার্ক বাউচার (উইকেটরক্ষক) ৮. শন পোলক ৯. পল এ্যাডামস ১০. ডালে স্টেইন ১১. এ্যালান ডোনাল্ড
ইংল্যাণ্ড:
ইংল্যাণ্ডের পেসত্রয়ী বাছাই করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছিলাম! এন্ড্রু ক্যাডিক, ম্যাথু হগার্ড কোন অংশে হার্মিসন, গফের চেয়ে কম যান না। গফ নিয়ণ্ত্রিত বোলিং ও তূলনামূলক ভাল রেকর্ডের জন্য বাকিদের চেয়ে এগিয়ে থেকে একাদশে স্থান পেয়েছেন। হার্মিসনের পেস ও ম্যাচের মোড়ঘুরানো স্পেলসমূহের জন্য দলে জায়গা পাওয়া। বর্তমান সময়ে ইংলিশ পেস এ্যাটাকের নেতৃত্ব দেওয়া এ্যাণ্ডারসন অটোমেটিক চয়েস! স্টুয়ার্ট ব্রডের বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট করার দক্ষতা থাকায় তাকে নিয়েও ভাবতে হয়েছে। স্পিনার হিসেবে মন্টি পানেসার ও এ্যাশলি জাইলস প্রাথমিক বিবেচনায় থাকলেও সোয়ান তাদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। মিডল অর্ডারে থর্পের সাথে পল কলিংউড প্রাথমিক বিবেচনায় ছিলেন। দল নির্বাচনে অধিনায়কসহ প্রথম তিনটি স্থান নির্বাচন করতে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়েছে। ম্যাট প্রায়রকে উইকেটরক্ষক হিসেবে নিলে হয়তো সমস্যা কিছু কমত। কিন্তু ইংলিশ টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান স্টুয়ার্টকে কেউ বাদ দিবেন বলে মনে হয় না। অধিনায়ক হিসেবে দুই সফল নেতা ভন ও স্ট্রাউস বিবেচনায় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়ক ভন জায়গা পেয়েছেন। তিনে ভনের সাথে দৌঁড়ে জোনাথান ট্রট ও নাসের হুসেইনও ছিলেন। ক্যারিয়ারে ৪৫ টেস্টে ওপেন করা স্টুয়ার্ট ওপেনিংয়ে সফল বলে বাকি একটি স্থানের জন্য মাইকেল আথারটন, এন্ড্রু স্ট্রাউস, এ্যালিস্টার কুক ও মার্কাস ট্রেসকোথিক বিবেচনায় ছিলেন। কুক না ট্রোসকোথিক ভাবতে ভাবতে মারমুখী ট্রোসকোথিককেই প্রাধান্য দিলাম!
আমার দেখা ইংল্যাণ্ডের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. মার্কাস ট্রেসকোথিক ০২. এ্যালেক স্টুয়ার্ট (উইকেটরক্ষক) ০৩. মাইকেল ভন (অধিনায়ক) ০৪. কেভিন পিটারসেন ০৫. গ্রাহাম থর্প ০৬. ইয়ান বেল ০৭. এণ্ড্রু ফ্লিনটফ ০৮. গ্রায়েম সোয়ান ০৯. জেমস এ্যাণ্ডারসন ১০. স্টিভ হার্মিসন ১১. ড্যারেন গফ
অস্ট্রেলিয়া:
টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার নিরঙ্কুশ আধিপত্যের এক দশক দেখার সৌভাগ্য হওয়ায় সেরা একাদশ বাছাই করতে গিয়ে অনেক ভাবতে হয়েছে। ভাগ্যিস বোর্ডারের খেলা দেখা হয় নি! বুনও অবসর নেন ৯৬ সালে। তারপরেও সাবেক অধিনায়ক মার্ক টেলর, বর্তমান অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ও ইয়ান হিলির মত খেলোয়াড়দের একাদশের বাইরে রাখতে হয়েছে। বোলারদের মধ্যে গিলেস্পিকে বাইরে রাখা কঠিনই ছিল। তবে দলের এ্যাটাকে বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে জনসনকে প্রাধান্য দিতে হয়েছে। পেস নির্ভর অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয় স্পিনারের কথা ভাবাও যে পাপ তাই ম্যাকগিলের কথা মনে পড়লেও তাকে নিয়ে বেশিদূর ভাবতে পারি নি!
আমার দেখা অস্ট্রেলিয়ার সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২) : ০১. ম্যাথু হেইডেন ০২. জাস্টিন ল্যাঙ্গার ০৩. রিকি পন্টিং ০৪. মার্ক ওয়াহ ০৫. স্টিভ ওয়াহ (অধিনায়ক) ০৬. মাইক হাসি ০৭. এ্যাডাম গিলক্রিষ্ট (উইকেটরক্ষক) ০৮. শেন ওয়ার্ন ০৯. ব্রেট লী ১০. মিচেল জনসন ১১. গ্লেন ম্যাকগ্রাথ
পাকিস্তান:
ওপেনার হিসেবে আনোয়ারের সঙ্গী খুঁজতে গিয়ে ভালমানের কাউকে পাই নি! তৌফিক উমর, রমিজ রাজা ও হাফিজের চেয়ে আমির সোহেলকেই যোগ্য মনে হয়েছে। মিডল অর্ডারে ইজাজ আহমেদের কথা ভাবলেও তারকা ব্যাটসম্যানদের কারণে একাদশে এ ব্যাটসম্যানের স্থান হয় নি। ছয়ে মিসবাহ-উল-হকের কথা অনেকে হয়তো ভাববেন কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে মিসবাহ পাঁচে ব্যাট করেন! উইকেটরক্ষক হিসেবে মঈন খান, রশিদ লতিফদের রেখে কামরানকে নেওয়াটা কঠিন হলেও তার ব্যাটিং সামর্থ্যের কথা ও দুই শতাধিক ডিসমিসালের কথা কারও অজানা নয়! স্পিনার হিসেবে আজমলের সাথে সাকলাইন মুস্তাক, দানিশ কানেরিয়া, মুস্তাক আহমেদের নাম বিবেচনায় আসে। আজমলের অসাধারণ নৈপূণ্যের কারণে আমার বিবেচনায় একমাত্র স্পিনার হিসেবে উঠে এসেছে তার নাম। উমর গুল, মোহাম্মদ আসিফ ও শোয়েব আকতার তৃতীয় পেসার হিসেবে প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। গতি, গড়, স্ট্রাইক রেট দিয়ে শোয়েব দলে জায়গা করে নিলেও যদি আসিফ নিষিদ্ধ না হয়ে এখনো খেলতেন একাদশটা অন্যরকম হত!
আমার দেখা পাকিস্তানের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. সাঈদ আনোয়ার ০২. আমির সোহেল ০৩. ইউনিস খান ০৪. ইনজামাম-উল-হক ০৫. মোহাম্মদ ইউসুফ ০৬. সেলিম মালিক ০৭. কামরান আকমল (উইকেটরক্ষক) ০৮. ওয়াসিম আকরাম (অধিনায়ক) ০৯. শোয়েব আকতার ১০. সাঈদ আজমল ১১. ওয়াকার ইউনিস
ভারত:
ভারতের টেস্ট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির পরিবর্তে আরেক সফল অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহার উদ্দিনের অন্তভূক্তিটা সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও এ কথা মানতেই হবে আজহারের সমসাময়িক টেস্ট অধিনায়কদের মধ্যে মাইকেল আথারটন, স্টিভেন ফ্লেমিং ও অর্জুনা রানাতুঙ্গারা থাকা সত্ত্বেও মার্ক টেলর, হ্যান্সি ক্রনিয়ের সাথেই সফল অধিনায়ক হিসেবে উচ্চারিত হত আজহারের নাম। মনসুর আলী খান পতৌদি, গাভাস্কার, কপিলের পরের দুই যুগের ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। আজহারের ভারত, সৌরভের `টিম ইণ্ডিয়া` ও ধোনির সফল ভারত। ভারত যে টেস্ট ক্রিকেটে এক সময় শীর্ষে উঠল তার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় আজহারের আমলে! স্বভাবসুলভ অধিনায়কোচিত মনোভাব, চমৎকার ব্যাটিং স্টাইল ও চোখ ধাঁধানো সব স্ট্রোক খেলে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ক্রিকেটার। এছাড়া নভোজিৎ সিং সিধু ও ভেংকটেশ প্রাসাদ হয়তো কারো কারো সেরা একাদশে স্থান পেতে পারেন।
আমার দেখা ভারতের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২) : ০১. বীরেন্দর শেহওয়াগ ০২. গৌতম গাম্ভীর ০৩. রাহুল দ্রাবিড় ০৪. শচীন টেণ্ডুলকার ০৫. মোহাম্মদ আজহার উদ্দিন ০৬. ভিভিএস লক্ষ্মণ ০৭. মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক) ০৮. অনিল কুম্বলে ০৯. হরভজন সিং ১০. জহির খান ১১. জাভাগাল শ্রীনাথ
শ্রীলঙ্কা:
শ্রীলঙ্কার সেরা একাদশ বাছাই করতে গিয়ে ওপেনিংয়ে দিলশানকে বাইরে রাখতে একটু ভাবতে হয়েছে। আতাপাত্তুর মতো টেস্ট ব্যাটসম্যানকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। জয়সুরিয়ার ব্যাটিং রেকর্ডের সাথে ৯৮ উইকেট, দিলশানের সুযোগকে সীমিত করেছে। তবে যখন দিলশান অবসর নিবেন ততদিনে দুই ওপেনারের যে কোন একজনকে পেছনে ফেলে তখনকার সেরা একাদশে জায়গা পেলেও পেতে পারেন! সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটা থিলান সামারাবীরাকে তালিকার বাইরে রাখার মধ্য দিয়ে নিতে হয়েছে। লঙ্কান উত্থানের নায়ক ও বুদ্ধিমান অধিনায়ক রানাতুঙ্গার ক্যারিয়ার গড় সামারাবীরার চেয়ে অনেক কম হলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় মূল একাদশে স্থান পেয়েছেন। অরবিন্দ একজন চৌকস মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। দলে পাঁচজন বোলারককে স্থান দিতে গিয়ে পঞ্চাশোর্ধ গড়ে রান করা থিলানকে দলে রাখা যায় নি! উইকেটরক্ষক হিসেবে সাঙ্গাকারাকে না নিয়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিলে সাবেক অধিনায়ক হাসান তিলেকরত্মেই স্থান পেতেন। মুরালির সাথে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে অজন্তা মেন্ডিসকে টপকে হেরাথ স্থান পেয়েছেন। ভাস উত্তর মালিঙ্গা ছাড়া ভালমানের পেসার না আসায় অভিজ্ঞতা ও পেসকে প্রাধান্য দিয়ে তৃতীয় পেসার হিসেবে দিলহারাকে নেওয়া হয়েছে। রোশান মহানামাও আমার ভাবনায় এসেছিলেন!
আমার দেখা শ্রীলঙ্কার সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২) : ১. সনাথ জয়সুরিয়া ২. মারভান আতাপাত্তু ৩. কুমার সাঙ্গাকারা (উইকেটরক্ষক) ৪. অরবিন্দ ডি সিলভা ৫. মাহেলা জয়াবর্ধনে ৬. অর্জুনা রানাতুঙ্গা (অধিনায়ক) ৭. চামিন্দা ভাস ৮. রঙ্গনা হেরাথ ৯. লাসিথ মালিঙ্গা ১০. দিলহারা ফার্নাণ্ডো ১১. মুত্তিয়া মুরালিধরন
ওয়েস্ট ইণ্ডিজ:
দূর্ধর্ষ ওয়েস্ট ইণ্ডিজের খেলা দেখা হয়নি বলে সেরা একাদশ বাছাই করতে তেমন সমস্যায় পড়ি নি। দলে তৃতীয়য় পেসার হিসেবে কেমার রোচ, ফিদেল এডওয়ার্ডস ও বিশপের মাঝে বিশপকেই মনে ধরেছে। উইকেটরক্ষক হিসেবে দিনেশ রামদিন ও জে আর মারেকে পিছনে ফেলে জ্যাকব হয়েছেন মনোনীত। ওপেনিংয়ে ক্যাম্পবেলের সাথে হাইণ্ডস ও গঙ্গা প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। মিডল অর্ডারে জিমি এ্যাডামসের জায়গা না হলেও ওয়েস্ট ইণ্ডিজ দলে ভাল কোন স্পিনার না থাকায় হুপার, গেইলের সাথে পার্টটাইমার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন। স্পেশালিষ্ট স্পিনার হিসেবে সুলেমন বেন প্রাথমিক ভাবনায় ছিলেন!
আমার দেখা ওয়েস্ট ইণ্ডিজের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. ক্রিস গেইল ০২. শেরউইন ক্যাম্পবেল ০৩. রামনরেশ সারওয়ান ০৪. ব্রায়ান লারা ০৫. শিবনারায়ণ চন্দরপল ০৬. কার্ল হুপার ০৭. জিমি এ্যাডামস ০৮. রিডলী জ্যাকবস (উইকেটরক্ষক) ০৯. ইয়ান বিশপ ১০. কোর্টনি ওয়ালশ (অধিনায়ক) ১১. কার্টলি আমব্রোস
নিউজিল্যাণ্ড:
ব্ল্যাক ক্যাপসদের ওপেনিংয়ে ইয়াং, গাপটিল, রাইডারকে রিচার্ডসনের সঙ্গী হিসেবে প্রাথমিক বিবেচনায় রাখলেও টেস্টে তাদের রেকর্ড ভাল না হওয়ায় ও সেরা দল গঠনের স্বার্থে ম্যাককুলাম ওপেনিংয়ে স্থান দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য এ্যাডাম প্যারোরেকে পিছনে ফেলে জায়গা পাওয়া এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লেইট মিডল অর্ডারেই অধিক সফল। অলরাউণ্ডার হিসেবে কেয়ার্নসের পাশাপাশি ওরামও ভাবনায় ছিলেন। স্পিন ও পেস এ্যাটাকে নির্বাচিতদের বাইরে তেমন ভাল বিকল্প ছিল না।
আমার দেখা নিউজিল্যাণ্ডের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. মার্ক রিচার্ডসন ০২. ব্রেণ্ডন ম্যাককুলাম (উইকেটরক্ষক) ০৩. স্টিফেন ফ্লেমিং (অধিনায়ক) ০৪. রস টেলর ০৫. নাথান এ্যাস্টলে ০৬. ক্রেইগ ম্যাকমিলান ০৭. ক্রিস কেয়ার্নস ০৮. ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ০৯. শেন বণ্ড ১০. ড্যানি মরিসন ১১. ক্রিস মার্টিন
বাংলাদেশ:
বাংলাদেশ দলে ওপেনার হিসেবে নাফিস, জুনায়েদ প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। মিডল অর্ডারে রাজিন সালেহ, অলক কাপালি, মাহমুদ উল্লাহ প্রমুখ প্রাথমিক ভাবনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মূল দলে জায়গা পান নি। উইকেটরক্ষক হিসেবে মুশফিককে পেছনে ফেলে তালিকায় স্থান পেয়েছেন খালেদ মাসুদ। খালেদ মাহমুদ ও তাপস বৈশ্যের কথাও প্রাথমিক বিবেচনায় যথাক্রমে অলরাউণ্ডার ও পেসার হিসেবে এসেছিল।
আমার দেখা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা টেস্ট একাদশ (২০০০-২০১২): ০১. জাভেদ ওমর বেলিম গুল্লু ০২.তামিম ইকবাল ০৩. হাবিবুল বাশার সুমন (অধিনায়ক) ০৪. আমিনুল ইসলাম বুলবুল ০৫. মোহাম্মদ আশরাফুল ০৬. সাকিব আল হাসান ০৭. খালেদ মাসুদ পাইলট (উইকেটরক্ষক) ০৮. মোহাম্মদ রফিক ০৯. মাশরাফি বিন মর্তুজা ১০. এনামুল হক জুনিয়র ১১. মন্জুরুল ইসলাম।
জিম্বাবুয়ে:
জিম্বাবুয়ের দল নির্বাচন করতে গিয়ে গ্রাণ্টের সঙ্গী হিসেবে ত্রিশ গড়ধারী অভিজ্ঞ ওপেনার পাচ্ছিলাম না। মিডল অর্ডারে মারে গুডউইন, স্টুয়ার্ট কার্লাইল, টাইবু, ক্রেইগ হুইশার্ট, মাসাকাদজা প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। ব্রেণ্ডন টেলর ও নীল জনসনের কথা মনে পড়লেও একাদশে তাদের ঠাঁই হয় নি।
আমার দেখা জিম্বাবুয়ের সেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. গ্রাণ্ট ফ্লাওয়ার ০২. গ্যাভিন রেনি ০৩. এ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল ০৪. ডেভ হফটন ০৫. এ্যাণ্ডি ফ্লাওয়ার (উইকেটরক্ষক) ০৬. গাই হুইটাল ০৭. হিথ স্ট্রিক (অধিনায়ক) ০৮. পল স্ট্র্যাং ০৯. এণ্ডি ব্লিগনট ১০. রেমণ্ড প্রাইস ১১. হেনরি ওলঙ্গা
বিশ্বসেরা টেস্ট টিম:
প্রায় দেড় যুগে (১৯৯৬-২০১২) ক্রিকেট বিশ্ব অনেক বিশ্বমানের টেস্ট ক্রিকেটারের আবির্ভাব ও সেরা পারফরম্যান্সগুলো দেখেছে। আমিও বেশ কিছু নান্দনিক ইনিংস ও মহাকাব্য দেখেছি যেমন দেখেছি আগুন ঝরানো বোলিং, ঘূর্ণিবলের জাদু। এ সময়ে খেলা খেলোয়াড়দের থেকে সেরা এগার নির্বাচনও তাই কষ্টসাধ্য। এ সময়ের সেরা দল গঠন করতে গিয়ে ওপেনিংয়ে আমার প্রাথমিক বিবেচনায় ছিলেন গ্রায়েম স্মিথ, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, হেইডেন, শেহওয়াগ, আতাপাত্তু ও গেইল। বিদেশের মাটিতে গড় কমে যাওয়া ও দলীয় দ্বিতীয় ইনিংসে প্রায়শ:ই ব্যর্থতা শেহওয়াগকে ঠেলে দিয়েছে ব্যাকফুটে, গড় বুমেরাং হয়েছে গেইল, আতাপাত্তুর জন্য। ল্যাঙ্গার কাছাকাছি থাকলেও স্মিথকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন নি। ওয়ান ডাউনে হাশিম আমলা, রিকি পন্টিং, রাহুল দ্রাবিড়, কুমারর সাঙ্গাকারার মাঝে শেষের তিনজন ক্রিকেট গ্রেট। কেউ কারও চেয়ে কম নন। ক্ল্যাসিক ব্যাটিংয়ের জন্য `দ্যা ওয়াল` ও সাঙ্গার খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। পান্টার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল একজন অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান। আমলা নির্ভরতার প্রতীক। সাঙ্গাকারা দ্রাবিড়কে টপকে পেয়েছেন দলে ঠাঁই (ব্যাটসম্যান হিসেবে)। চারে ব্যাটিং জিনিয়াস শচীন, ক্যারিবীয় ক্রিকেটের গর্ব কিংবদন্তী লারা, ক্যালিস, ক্রাইসিসম্যান ইনজামামুল হক ও ইংলিশ তারকা কেভিন পিটারসেন প্রাথমিক তালিকায় ছিলেন। জ্যাককে মূলত অলরাউণ্ডার ক্যাটেগরির জন্য ভাবা হলেও শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে লারা, শচীন, ইনজিদের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। অনেক হিসেব নিকাশ শেষে লারাকে হটিয়ে শচীনকে জায়গা দেওয়ায় কারো আপত্তি থাকার কথা নয়! মিডল অর্ডারের বাকি স্থানটির জন্য স্টিভ ওয়াহ, মাইক হাসি, জয়াবর্ধনে, লক্ষ্মণ, চন্দরপল, মোহাম্মদ ইউসুফ বিবেচনায় ছিলেন। স্টিভ ওয়াহ অধিনায়কত্বে সফলতার কারণে আমার বিবেচনায় বাকিদের চেয়ে এগিয়ে। অলরাউণ্ডার হিসেবে ক্রিস কেয়ার্নস, কার্ল হুপার, শন পোলক, এণ্ড্রু ফ্লিনটফরা প্রাথমিকভাবে থাকলেও নিশ্চিন্তে ক্যালিসকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। উইকেটরক্ষক হিসেবে বাউচার, এণ্ডি ফ্লাওয়ার ও স্টুয়ার্টকে রেখে কিংবদন্তী উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান গিলিকে নেওয়া ছিল সবচেয়ে সহজতম সিদ্ধান্তগুলোর একটি। এক স্পিনার নাকি দুই স্পিনার ভাবতে গিয়ে দুইজনকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ভেট্টোরি, সোয়ান, আজমল, ওয়ার্ন, সাকলাইন, কুম্বলে, হরভজন, মুরালিধরনদের মাঝে শেন ওয়ার্ন ও মুরালিধরন অটোমেটিক চয়েস। তবে এক স্পিনার নিলে আমার দলে শেন ওয়ার্নের জায়গা হত! ম্যাকগ্রাথ, ওয়ালশ, আমব্রোস, ওয়াকার, ডোনাল্ড, স্টেইন, বণ্ড, ওয়াসিমদের থেকে দু পেসার বাছাই করাটা খুবই কঠিন কাজ। ওয়াসিম ও ম্যাকগ্রাথকে দলে নিয়ে সেই কঠিন কাজটিও শেষ করতে হল। তিন পেসার নিলে আমব্রোস, ডোনালড, ওয়াকার ও স্টেইনের মাঝে কাকে নিতাম সেটা না হয় রহস্য হয়েই থাক!
আমার দেখা বিশ্বসেরা টেস্ট একাদশ (১৯৯৬-২০১২): ০১. ম্যাথু হেইডেন ০২. গ্রায়েম স্মিথ ০৩. কুমার সাঙ্গাকারা ০৪. শচীন টেণ্ডুলকার ০৫. স্টিভ ওয়াহ (অধিনায়ক) ০৬. জ্যাক ক্যালিস ০৭. এ্যাডাম গিলক্রিষ্ট (উইকেটরক্ষক) ০৮. ওয়াসিম আকরাম ০৯. শেন ওয়ার্ন ১০. মুত্তিয়া মুরালিধরন ১১. গ্লেন ম্যাকগ্রাথ।
Post a Comment