0
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর এ দেশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু। সেই থেকে একে একে প্রচারিত হয়েছে নাটকসহ নানা অনুষ্ঠান। টেলিভিশনে প্রথম প্রচারিত নাটকের নাম কি, কবে প্রথম সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রচার শুরু হয়েছিল-ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ঘুরেফিরেই আসে।
প্রথম অনুষ্ঠান ঘোষক
এদেশে টেলিভিশন যাত্রা শুরু করার পর দর্শকরা প্রথম যে ঘোষককে দেখেন তার নাম মোডি কোহেন। তিনিই ছিলেন উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠান ঘোষণায়। প্রথম দিনের মতো এখনও বিটিভি অনুষ্ঠান ঘোষণা চলছে। এ ধারা অনুসরণ করছে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলা আর চ্যানেল আই।
প্রথম গানের অনুষ্ঠান
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিকেলে ডিআইটি ভবনের বাইরে বিরাট সামিয়ানায় এ দেশের টেলিভিশনের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খান। তারপরই স্টুডিও থেকে প্রচার হয় প্রথম গানের অনুষ্ঠান। আর ওই অনুষ্ঠানের শিল্পী ছিলেন ফেরদৌসী রহমান। প্রথমে শিল্পী গান আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা ও আনোয়ারউদ্দিন খানের সুর করা ‘ওই যে আকাশ নীল হলো আজ/ সে শুধু তোমার প্রেমে/ ওই যে বাতাস বাঁশি হলো আজ/ সে শুধু আমার প্রেমে’ গানটি। এ সময় শিল্পীর পরনে ছিল সোনালি পাড়, সবুজ শাড়ি। গায়ে লাল চাদর আর কপালে টিপ। তারপর ফেরদৌসী রহমান গেয়েছিলেন একটি ভাওয়াইয়া গান।
প্রথম সংবাদ
এদেশে টেলিভিশন যেদিন যাত্রা শুরু করে সেদিন থেকেই সংবাদ প্রচার শুরু হয়। বাংলায় প্রথম সংবাদ পাঠ করেন হুমায়ূন চৌধুরী। তিনি ছিলেন মূলত রেডিওর ঘোষক। টেলিভিশনের ঘোষক হিসেবে তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল। এরপর অনেকটা জোর করেই তাকে খবর পড়তে বসিয়ে দেয়া হয়েছিল। হুমায়ূন চৌধুরী পরে টেলিভিশন সংবাদে নিয়মিত হয়ে ওঠেন। ১৯৮৪ সালে এশিয়াভিশনের সমন্বয়কারী হিসেবে যোগ দেবার আগে তিনি বিটিভি সংবাদ বিভাগেই কাজ করেছেন।
প্রথম দিনের  ইংরেজি খবর পড়েছিলেন আলম রশিদ।
প্রথম সঙ্গীত শিক্ষার আসর
ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর প্রচারিত হয় প্রথম সঙ্গীত শিক্ষার আসর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন ফেরদৌসী রহমান। প্রথম দিন শিল্পী শিখিয়েছিলেন একটি নজরুলগীতি। শিরোনাম ছিল- ‘বউ কথা কউ/ বউ কথা কও’।এরপরেও ফেরদৌসী রহমান বিটিভির সঙ্গীত শিক্ষার অনুষ্ঠান ‘এসো গান শিখি, নিয়মিত সঞ্চালনা করে আসছেন।
প্রথম নাটক
ডিআইটি ভবনে থাকতেই স্বল্প কারিগরী সুবিধা নিয়ে প্রচারিত হয়েছিল প্রথম নাটক ‘একতলা দোতলা’। শহীদ মুনীর চৌধুরী লিখেছিলেন এই নাটকটি। প্রযোজনা করেছিলেন মনিরুল আলম। সে সময় সরাসরি প্রচারিত এ নাটকটিতে সে সময়ের জনপ্রিয় শিল্পীরা অভিনয় করেছিলেন।
শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক প্রথম অনুষ্ঠান ১৯৬৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রচারিত হয় টেলিভিশনের প্রথম শিল্প ও সংস্কৃতিভিত্তিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছিলেন হুমায়ূন চৌধুরী। সরাসরি প্রচারিত এ অনুষ্ঠানে সেদিন আবহমান বাংলার প্রকৃতির ছবি এঁকেছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন।
বিজ্ঞাপনভিত্তিক অনুষ্ঠান ঘরোয়া
টেলিভিশন যখন যাত্রা শুরু করেছিল তখন এদেশে বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ হতো না। বিভিন্ন পণ্যের প্রচারের জন্য পথ খোঁজা শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রচার শুরু হয় বিজ্ঞাপনভিত্তিক ঘরোয়া নামের একটি অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানে নাটিকার মাধ্যমে পণ্যসামগ্রীর নাম বলা হতো। অনুষ্ঠানটি সে সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এতে নিয়মিতভাবে অভিনয় করতেন নায়করাজ রাজ্জাক, আনোয়ারা আহমেদ, লালু, মুসা আহমেদ, শিমুল বিল্লাহ প্রমুখ।
দেশ স্বাধীন হবার পর প্রথম টেলপ
১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হবার পর মুক্তিযোদ্ধা ক্র্যাক প্লাটুন টেলিভিশনের দায়িত্ব নেয়। ক্র্যাক প্লাটুনে ছিলেন সাবেক বিচিত্রা সংম্পাদক শাহদত চৌধুরীসহ আরও অনেকে। পরদিন ১৭ ডিসেম্বর টিভি পর্দায় বাংলাদেশ টেলিভশন নামে একটি টেলপ ভেসে ওঠে। এই টেলপটি লিখেছিলেন আব্দুল মান্নান যিনি পরে বিটিভির পরিচালক ডিজাইন হিসেবে কাজ করেছেন।
প্রথম ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান
বিটিভির প্রথম ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের নাম ‘সপ্তবর্ণা’। আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের গ্রন্থনা ও উপস্থাপনায় এ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটির প্রচার শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। এ অনুষ্ঠানটির জন্য ১৯৭৭ সালে জাতীয় পুরস্কার পান আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ।
‘সপ্তবর্ণা’ প্রচার শুরুর পরপরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এর মাধ্যামেই বিটিভিতে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের জন্য একটি জায়গা তৈরি হয়। এরপর প্রচারসূচিতে যুক্ত হয় ফজলে লোহানীর ‘যদি কিছু মনে না করেন’ আর হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’র মতো আরও কিছু অনুষ্ঠান।
‘সপ্তবর্ণা’ দেশের অনেককেই তারকাখ্যাতি দিয়েছে। এরমধ্যে ফিরোজ সাঁই, ফকির আলমগীর, পিলু মমতাজ ও ফেরদৌস ওয়াহিদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইলেকট্রনিক রিপোর্টিং-এর পথিকৃত
আজ দেশে বিটিভিসহ অনেক চ্যানেলেই নানা রিপোর্ট প্রচার হচ্ছে। দেশে এই রিপোর্টিং ধারার পথিকৃত প্রয়াত ফজলে লোহানী। তিনি তার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘যদি কিছু মনে না করেন’-এর জন্য বেশ কিছু আলোচিত বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নিপা নামের এক অসহায় কিশোরীর ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য অর্থ সংগ্রহের ব্যবস্থা আর ওই সার্জারি সরাসরি সম্প্রচার করে।
কৃষিভিত্তিক প্রথম অনুষ্ঠান
বিটিভিতে কৃষিভিত্তিক প্রথম অনুষ্ঠানের নাম ‘আমার দেশ’। আশি দশকে এ অনুষ্ঠানটির প্রচার শুরু হয়। এটি প্রযোজনায় ছিলেন আলীমুজ্জামান দুলু। এ অনুষ্ঠানের পর ১৯৮৬ সালে শুরু হয় ‘মাটি ও মানুষ’ এর সম্প্রচার। অনুষ্ঠানটি এখনও চলছে।
প্রথম ঈদের নাটক
বিটিভিতে প্রথমবারের মতো ঈদের নাটক হিসেবে প্রচারিত হয় আমজাদ হোসেনের লেখা ‘এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া’। এটি আমজাদ হোসেনের লেখা ‘জব্বার আলী’ সিরিজের প্রথম নাটক। নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন আমজাদ হোসেন, সুবর্ণা মুস্তফা, জাহানারা আহমেদ, ফরিদ আলী, টেলি সামাদ প্রমুখ।
প্রথম প্যাকেজ নাটক
বহিরাগত নির্মাতাদের নির্মিত নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিটিভিতে প্রথম যে নাটকটি প্রচার হয় সেটি ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনসৃষ্ট জনপ্রিয় চরিত্র মাসুদ রানা কেন্দ্রিক। নাটকটির নাম ছিল ‘প্রাচীর পেরিয়ে’। এটি রচান ও পরিচালনা করেছিলেন প্রয়াত আতিকুল হক চৌধুরী। অভিনয়ে ছিলেন নোবেল ও বিপাশা হায়াত।
প্রথম প্যাকেজ ম্যাগাজিন
প্রথম প্যাকেজ ম্যাগাজিন হিসেবে বিটিভি প্রচার করে হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’। ‘যদি কিছু মনে না করেন’ বন্ধ হয়ে যাবার পর বিটিভিতে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনা ও উপস্থাপনায় প্রচার শুরু হয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। বিটিভি বহিরাগত নির্মাতাদের নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারের সিদ্ধান্ত নেবার পর হানিফ সংকেত ‘ইত্যাদি’ প্যাকেজের আওতায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। নব্বই দশক থেকে এটি প্যাকেজের আওতায় নিয়মিতভাবে প্রচার হচ্ছে।

YOUR NAMEAbout Me
আসসালামু আলাইকুম। নবীন বাংলা ব্লগ সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম। আসলে এই ব্লগ সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এবং আমি এই সাইটের এডমিন, মূলত ব্লগিং প্রাকটিস এবং মুক্ত জ্ঞাণ চর্চার জন্যই এই সাইটটি ওপেন করেছি। আমার সাইটের পোস্টগুলো অন্যান্য সুনাম খ্যাত ব্লগ সাইটে সমূহে পাবলিশ করে থাকি তথারুপ টেকটিউন্স, টিউনারপেইজ। ইনশাআল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব নবীন বাংলা ব্লগে লেখালেখি করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে অন্যান্য লেখকদের বাছাই করা পোস্টগুলো পাবলিশ করা হয়। এবং ইচ্ছা করলে আপনিও এই ব্লগের অতিথি লেখক হিসাবে শুরু করতে পারেন।পরিশেষে আমার সাইট কিংবা প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে কোন আপনাদের অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহন করা হবে। আবারো ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সবাইকে!!
Follow : | | Facebook | Twitter

Post a Comment

 
Top