মূল লেখার লিংক
র্যাঙ্কিং বিষয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া খুবই বিচিত্র। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং-এ নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেমে গেলে সেই র্যাঙ্কিং “গাঁজা খাওয়া” র্যাঙ্কিং হিসেবে উপাধি পায়, আবার একই র্যাঙ্কিং-এ নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপরে উঠলে লোকে মুচকি মুচকি হাসে।
র্যাঙ্কিং বিষয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া খুবই বিচিত্র। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং-এ নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেমে গেলে সেই র্যাঙ্কিং “গাঁজা খাওয়া” র্যাঙ্কিং হিসেবে উপাধি পায়, আবার একই র্যাঙ্কিং-এ নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উপরে উঠলে লোকে মুচকি মুচকি হাসে।
তবে যে যাই বলুক, আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিং বিষয়টা বড়ই ক্যাচালের। বিভিন্ন পত্রিকার করা এসব র্যাঙ্কিং এর পেছনে টাকার অবদান যে নেই, তাও জোর দিয়ে বলা যায় না। তাছাড়া ওগুলো কম্পাইল করতে যে ডেটা নেয়া হয়, সেটা কীভাবে এবং কতটা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়, তাও একটা বড় প্রশ্ন বটে। সেই তুলনায় বিভিন্ন খেলার র্যাঙ্কিং, যেমন ফিফার করা ফুটবলের, ফিডের করা দাবার, এটিপির করা টেনিসের এবং আইসিসির করা ক্রিকেটের র্যাঙ্কিং ঢের ভালো। এগুলোর পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে কিন্তু অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার উপায় নেই। কারণ, এগুলো গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে করা হয়। জয়, পরাজয়, প্রতিপক্ষ এবং কম্পিটিশন বিবেচনায় সরাসরি সূত্রের মাধ্যমে পয়েন্ট বের করে অবস্থান নির্ণয় করা হয়।এই র্যাঙ্কিং নিয়ে এত কথা বলার কারণ আজ প্রকাশিত ফিফা র্যাঙ্কিং। এবার ব্রাজিল সেরা দশে থাকতে পারে নি। আর এ কারণেই মূলতঃ ব্রাজিল সমর্থকবৃন্দ মহা রেগে আছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোয় তাদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চোখে পড়লো অনেক বার। সবারই কথার মূল বক্তব্য মোটামোটি একই, “গাঁজা খেয়ে এই র্যাঙ্কিং বানিয়েছে নাকি?”। তারা ভুলেই গিয়েছেন এই ফিফা র্যাঙ্কিং-এ সবচেয়ে বেশি সময় শীর্ষে থাকার রেকর্ডটা ব্রাজিলেরই। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত এবং ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত র্যাঙ্কিং যে পদ্ধতি অনুসারে তৈরি করা হয়েছিল তাতে ব্রাজিল ১৯৯৫ থেকে ২০০১ পর্যন্ত এবং ২০০৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত একটানা শীর্ষে ছিল। ২০০৬ সনে র্যাঙ্কিং এর হিসেব করার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হয় যদিও তখনও ব্রাজিলই শীর্ষে ছিল। এর পর স্পেনের সাথে পালা বদলের মাধ্যমে ২০০৯ ও ২০১০ সনেও ব্রাজিল শীর্ষে ওঠে। মজার ব্যাপার, তখন কিন্তু এই র্যাঙ্কিংকে ব্রাজিল সমর্থকদের গাঁজা খাওয়া র্যাঙ্কিং মনে হয় নি। কিন্তু ২০১০ এর পর থেকে ব্রাজিলের অবনমন শুরু হলে তারা ধীরেধীরে নেমে যেতে থাকে এবং আজ (৪ জুলাই ২০১২) প্রকাশিত র্যাঙ্কিং-এ ব্রাজিল সেরা দশের বাহিরে চলে গেলো। আর্জেন্টিনার সমর্থকরাও কম যাচ্ছেন না। তারাও সমালোচনায় মুখর হয়েছেন কারণ সর্বশেষ র্যাঙ্কিং-এ তাদের অবস্থান গিয়ে ঠেকেছে সাতে। যদিও এই একই র্যাঙ্কিং-এ ২০০৭ এবং ২০০৮ সনে তারা শীর্ষে ছিল কিন্তু তখন “আমরা কেন শীর্ষে” সূচক সমালোচনা দেখা যায় নি!
এ তো গেলো আলোচনা-সমালোচনার গল্প। এবার একটু দৃষ্টি ফেরানো যাক র্যাঙ্কিংটার দিকে। ফিফার র্যাঙ্কিংটা কোন রকেট সায়েন্স নয়। সাধারণ গণিত। হিসেবটা খুবই স্পষ্ট এবং আমরা নিজে নিজেই করতে পারি। যদিও র্যাঙ্কিং কার্যকর হয় একটা নির্দিষ্ট সময় থেকে, যেমন আজ থেকে কার্যকর হলো নূতন র্যাঙ্কিং; কিন্তু আপনি চাইলে এটা আগেই হিসেব করে ফেলতে পারবেন যদি না এর মধ্যে আর কারো কোন ম্যাচ থেকে থাকে। আমি গত ১ জুলাই এই র্যাঙ্কিংটা হিসেব করে সেরা পাঁচ-এর তালিকা আমার ফেইসবুকে দিয়ে রেখেছিলাম। তখন থেকেই বাকযুদ্ধ শুরু যা এই লেখার অনুপ্রেরণাও বলা যেতে পারে। যাইহোক, আগ্রহীরা এই লিঙ্ক দিয়ে র্যাঙ্কিং পেইজটা ঘুরে আসতে পারেন। ডান পাশে যে হিসেবটা দেখাচ্ছে, সেটা স্পেনের হিসেব। অন্য যে কোন দলের উপর ক্লিক করলে ডান পাশে সেই দলের হিসেব দেখাবে।
লক্ষ্য করুন, পাশে M I T C এবং P বলে পাঁচটা বেলুন আছে। এখানে M মানে ম্যাচ থেকে আর্জিত পয়েন্ট। সরাসরি জিতলে ৩ পয়েন্ট, টাইব্রেকারে জিতলে ২ পয়েন্ট, ড্র করলে অথবা টাইব্রেকারে হারলে ১ পয়েন্ট এবং সরাসরি হারলে কোন পয়েন্ট নেই অর্থাৎ শূন্য। টাইব্রেকারে ফল নির্ধারিত হলে মূলতঃ ড্র-ই ধরা হয় কিন্তু যে জিতবে সে হেরে যাওয়া দলের থেকে ১ পয়েন্ট বেশি পাবে কিন্তু একটা পূর্ণাঙ্গ জয়ের যে ৩ পয়েন্ট, সেটা সে পাবে না।
অন্য দিকে, I মানে ম্যাচের গুরুত্ব (Importance)। যে কোন ফ্রেন্ডলি ম্যাচের ওজন ১। বিশ্বকাপ বা রিজিওনাল চ্যাম্পিয়ানশিপ (ইউরো, কোপা আমেরিকা অথবা আফ্রিকা, এশিয়া ইত্যাদির যে টুর্নামেন্টগুলো আছে) কোয়ালিফাইং ম্যাচের ওজন ২.৫। রিজিওনাল চ্যাম্পিয়ানশিপের প্রতিটা ম্যাচের ওজন ৩ এবং বিশ্বকাপের প্রতিটা ম্যাচের ওজন ৪ করে।
T মানে প্রতিপক্ষ কতটা শক্তিশালী। এটা নির্ধারণ করা হয় এভাবে,
T = (২০০ – প্রতিপক্ষের বর্তমান র্যাঙ্কিং)
যেমন, স্পেনের র্যাঙ্কিং ছিল ১। তাই তাদের T ছিল ১৯৯। অথবা ইংল্যান্ডের র্যাঙ্কিং ছিল ৬ তাই তাদের T ছিল ১৯৪।
C মানে কনফেডারেশনের গুরুত্ব। ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার ওজন ১ করে। সেন্ট্রাল আমেরিকা ০.৮৮, এশিয়া এবং আফ্রিকা ০.৮৬ এবং ওশেনিয়া ০.৮৫। যে দুটো দলের মধ্যে খেলা হবে তাদের গড়মানই হবে C এর মান।
যেমন, এখন যদি স্পেন এবং ব্রাজিলের খেলা হয় তাহলে C হবে ১। কিন্তু স্পেন এবং ঘানার খেলা হলে C হবে ০.৯৩ ।
সবশেষে P মানে পয়েন্ট। হিসেব করতে হবে এভাবে,
P = M x I x T x C
উপরের সূত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোন দল যদি ম্যাচ হেরে যায় তাহলে M হবে শূন্য এবং যা পুরো গুনফলকে শূন্য করে ফেলবে। অর্থাৎ, কোন দল যদি ম্যাচ হেরে যায় তাহলে তারা ঐ ম্যাচ থেকে কোন পয়েন্ট অর্জন করতে পারবে না। তা না হলে কিছু না কিছু পয়েন্ট তারা পাবে।
এভাবে পয়েন্ট বের করে প্রতিটা দলের জন্যে ম্যাচ প্রতি গড় পয়েন্ট বের করা হবে। তবে র্যাঙ্কিং এর জন্যে যে পয়েন্ট হিসেব করা হয় সেটা সরাসরি এখান থেকে আসবে না। সেটা আসবে এ বছর এবং আগের তিন বছরের পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে। সেক্ষেত্রে ওজন হবে,
বর্তমান বছর ১০০%
গত বছর ৫০%
তার আগের বছর ৩০%
তারও আগের বছর ২০%
২০০৬ সনের আগে আট বছরের পয়েন্ট নিয়ে র্যাঙ্কিং করা হতো। কিন্তু এতে একটা সমস্যা দেখা যেত। ধরুন, কোন দল ৬-৭ বছর আগে অনেক ভালো ছিল কিন্তু এখন তেমন ভালো খেলছে না। তবুও র্যাঙ্কিং-এ তাদের অবস্থান উপরের দিকেই থাকতো আগের বছরের পয়েন্টের কারণে। মিডিয়ার ব্যাপক সমালোচনার পর ফিফা ২০০৬ সনে তাদের র্যাঙ্কিং-এর পদ্ধতি পরিবর্তন করে হিসেবের সময়টা ৪ বছর করেছে।
এবার আসুন, সমালোচনাটা কেন হচ্ছে সেটা দেখা যাক। আর্জেন্টিনার সমর্থকরা খুব রাগ কারণ ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচ জিতেও ৭ এ থেকে গেলো তাদের দল। কিন্তু কেন? কারণ তো অবশ্যই আছে। কি সেই কারণ? কারণ, আর্জেন্টিনা যে ম্যাচটা জিতেছে সেটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ ছিল যার Importance ফ্যাক্টর ১। বরং, আর্জেন্টিনা ইকুইডরকে হারিয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়েছে। অন্য দিকে, ইউরো চলার কারণে এখানে যে ম্যাচগুলো হয়েছে সেগুলোর Importance ফ্যাক্টর ছিল ৩। যার কারণে ইউরোতে ভালো ফল করা দলগুলো পয়েন্ট বেশি তুলতে পেরেছে। আর ব্রাজিলের অবনমনের কারণ তারা আগের র্যাঙ্কিং এবং আজকের র্যাঙ্কিং এর মাঝের সময়ে আর্জেন্টিনা এবং মেক্সিকোর সাথে দুটো ম্যাচ খেলেছে এবং দুটোই হেরেছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করলাম – কেউ কেউ দুই একটা ম্যাচ ভালো খেললে সমর্থকরা ভাবেন, আরে দুর্দান্ত খেলছে আমাদের দল। কিন্তু পরে দেখা যাচ্ছে র্যাঙ্কিং-এ ফল ভিন্ন। এ রকম একটা উদাহরণ ফ্রান্স। দুর্দান্ত ফেলেছে ফ্রেন্ডলি এবং বাছাইপর্বের ম্যাচগুলো। কিন্তু ইউরোতে একটা ম্যাচ ড্র এবং শেষ দুটো ম্যাচ হেরেছে যা তাদের জন্যে অনেক ভারী পড়েছে। মনে রাখতে হবে, ৬ টা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হারলে যে পরিমাণ পয়েন্ট হারানো সম্ভব, তার থেকে বেশি পয়েন্ট ইউরোর দুইটা ম্যাচে হারায় একটা দল। Importance ফ্যাক্টর এর ইমপোর্টেন্স কম নয় কিন্তু!
আবার কেউ কেউ বলছে, ইংল্যান্ড ৬ থেকে ৪ এ গেলো কেমন করে? উত্তর সহজ। এবারের ইউরোতে ইংল্যান্ড কোন ম্যাচ হারে নি। কোয়ার্টার ফাইনালে ইটালির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হারটা আসলে ড্র (আগেই ব্যাখ্যা করেছি এ বিষয়টা)।
আরেকটা কথা বলে শেষ করি। ফিফার ওয়েব সাইটটা কিন্তু দারুন ইন্টারএ্যাকটিভ। কোন দলের খেলা বাকি থাকলে সেখানে আপনি সম্ভাব্য ফল বসিয়েও র্যাঙ্কিং ক্যালকুলেট করতে পারবেন। আমি ইউরো চলার সময় বসে বসে করতাম। তবে এখনই ফিফার সাইটে ঝাঁপ দিয়ে লাভ নেই। বড় দলগুলোর সম্ভাব্য কোন খেলা এই মুহূর্তে নেই। তেমন উপলক্ষ্য তৈরি হলে সেই দলের পেইজে ডেটা ইনপুট দেয়ার ফিল্ডও তৈরি হয়ে যাবে। তখন সেখানে ইনপুট দিয়ে দিয়ে সম্ভাব্য র্যাঙ্কিং তৈরি করার খেলায় মেতে উঠতে পারেন।
অতএব, এই ছিল র্যাঙ্কিং বিষয়ক “কিছু কথা”। যার মূল বক্তব্য হচ্ছে, গাঁজা খেয়ে এই র্যাঙ্কিং কেউ করে নি। আর করলেও তাতে ফলের কোন পার্থক্য হবে না।
এ তো গেলো আলোচনা-সমালোচনার গল্প। এবার একটু দৃষ্টি ফেরানো যাক র্যাঙ্কিংটার দিকে। ফিফার র্যাঙ্কিংটা কোন রকেট সায়েন্স নয়। সাধারণ গণিত। হিসেবটা খুবই স্পষ্ট এবং আমরা নিজে নিজেই করতে পারি। যদিও র্যাঙ্কিং কার্যকর হয় একটা নির্দিষ্ট সময় থেকে, যেমন আজ থেকে কার্যকর হলো নূতন র্যাঙ্কিং; কিন্তু আপনি চাইলে এটা আগেই হিসেব করে ফেলতে পারবেন যদি না এর মধ্যে আর কারো কোন ম্যাচ থেকে থাকে। আমি গত ১ জুলাই এই র্যাঙ্কিংটা হিসেব করে সেরা পাঁচ-এর তালিকা আমার ফেইসবুকে দিয়ে রেখেছিলাম। তখন থেকেই বাকযুদ্ধ শুরু যা এই লেখার অনুপ্রেরণাও বলা যেতে পারে। যাইহোক, আগ্রহীরা এই লিঙ্ক দিয়ে র্যাঙ্কিং পেইজটা ঘুরে আসতে পারেন। ডান পাশে যে হিসেবটা দেখাচ্ছে, সেটা স্পেনের হিসেব। অন্য যে কোন দলের উপর ক্লিক করলে ডান পাশে সেই দলের হিসেব দেখাবে।
লক্ষ্য করুন, পাশে M I T C এবং P বলে পাঁচটা বেলুন আছে। এখানে M মানে ম্যাচ থেকে আর্জিত পয়েন্ট। সরাসরি জিতলে ৩ পয়েন্ট, টাইব্রেকারে জিতলে ২ পয়েন্ট, ড্র করলে অথবা টাইব্রেকারে হারলে ১ পয়েন্ট এবং সরাসরি হারলে কোন পয়েন্ট নেই অর্থাৎ শূন্য। টাইব্রেকারে ফল নির্ধারিত হলে মূলতঃ ড্র-ই ধরা হয় কিন্তু যে জিতবে সে হেরে যাওয়া দলের থেকে ১ পয়েন্ট বেশি পাবে কিন্তু একটা পূর্ণাঙ্গ জয়ের যে ৩ পয়েন্ট, সেটা সে পাবে না।
অন্য দিকে, I মানে ম্যাচের গুরুত্ব (Importance)। যে কোন ফ্রেন্ডলি ম্যাচের ওজন ১। বিশ্বকাপ বা রিজিওনাল চ্যাম্পিয়ানশিপ (ইউরো, কোপা আমেরিকা অথবা আফ্রিকা, এশিয়া ইত্যাদির যে টুর্নামেন্টগুলো আছে) কোয়ালিফাইং ম্যাচের ওজন ২.৫। রিজিওনাল চ্যাম্পিয়ানশিপের প্রতিটা ম্যাচের ওজন ৩ এবং বিশ্বকাপের প্রতিটা ম্যাচের ওজন ৪ করে।
T মানে প্রতিপক্ষ কতটা শক্তিশালী। এটা নির্ধারণ করা হয় এভাবে,
T = (২০০ – প্রতিপক্ষের বর্তমান র্যাঙ্কিং)
যেমন, স্পেনের র্যাঙ্কিং ছিল ১। তাই তাদের T ছিল ১৯৯। অথবা ইংল্যান্ডের র্যাঙ্কিং ছিল ৬ তাই তাদের T ছিল ১৯৪।
C মানে কনফেডারেশনের গুরুত্ব। ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকার ওজন ১ করে। সেন্ট্রাল আমেরিকা ০.৮৮, এশিয়া এবং আফ্রিকা ০.৮৬ এবং ওশেনিয়া ০.৮৫। যে দুটো দলের মধ্যে খেলা হবে তাদের গড়মানই হবে C এর মান।
যেমন, এখন যদি স্পেন এবং ব্রাজিলের খেলা হয় তাহলে C হবে ১। কিন্তু স্পেন এবং ঘানার খেলা হলে C হবে ০.৯৩ ।
সবশেষে P মানে পয়েন্ট। হিসেব করতে হবে এভাবে,
P = M x I x T x C
উপরের সূত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে, কোন দল যদি ম্যাচ হেরে যায় তাহলে M হবে শূন্য এবং যা পুরো গুনফলকে শূন্য করে ফেলবে। অর্থাৎ, কোন দল যদি ম্যাচ হেরে যায় তাহলে তারা ঐ ম্যাচ থেকে কোন পয়েন্ট অর্জন করতে পারবে না। তা না হলে কিছু না কিছু পয়েন্ট তারা পাবে।
এভাবে পয়েন্ট বের করে প্রতিটা দলের জন্যে ম্যাচ প্রতি গড় পয়েন্ট বের করা হবে। তবে র্যাঙ্কিং এর জন্যে যে পয়েন্ট হিসেব করা হয় সেটা সরাসরি এখান থেকে আসবে না। সেটা আসবে এ বছর এবং আগের তিন বছরের পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে। সেক্ষেত্রে ওজন হবে,
বর্তমান বছর ১০০%
গত বছর ৫০%
তার আগের বছর ৩০%
তারও আগের বছর ২০%
২০০৬ সনের আগে আট বছরের পয়েন্ট নিয়ে র্যাঙ্কিং করা হতো। কিন্তু এতে একটা সমস্যা দেখা যেত। ধরুন, কোন দল ৬-৭ বছর আগে অনেক ভালো ছিল কিন্তু এখন তেমন ভালো খেলছে না। তবুও র্যাঙ্কিং-এ তাদের অবস্থান উপরের দিকেই থাকতো আগের বছরের পয়েন্টের কারণে। মিডিয়ার ব্যাপক সমালোচনার পর ফিফা ২০০৬ সনে তাদের র্যাঙ্কিং-এর পদ্ধতি পরিবর্তন করে হিসেবের সময়টা ৪ বছর করেছে।
এবার আসুন, সমালোচনাটা কেন হচ্ছে সেটা দেখা যাক। আর্জেন্টিনার সমর্থকরা খুব রাগ কারণ ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচ জিতেও ৭ এ থেকে গেলো তাদের দল। কিন্তু কেন? কারণ তো অবশ্যই আছে। কি সেই কারণ? কারণ, আর্জেন্টিনা যে ম্যাচটা জিতেছে সেটা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ ছিল যার Importance ফ্যাক্টর ১। বরং, আর্জেন্টিনা ইকুইডরকে হারিয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়েছে। অন্য দিকে, ইউরো চলার কারণে এখানে যে ম্যাচগুলো হয়েছে সেগুলোর Importance ফ্যাক্টর ছিল ৩। যার কারণে ইউরোতে ভালো ফল করা দলগুলো পয়েন্ট বেশি তুলতে পেরেছে। আর ব্রাজিলের অবনমনের কারণ তারা আগের র্যাঙ্কিং এবং আজকের র্যাঙ্কিং এর মাঝের সময়ে আর্জেন্টিনা এবং মেক্সিকোর সাথে দুটো ম্যাচ খেলেছে এবং দুটোই হেরেছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করলাম – কেউ কেউ দুই একটা ম্যাচ ভালো খেললে সমর্থকরা ভাবেন, আরে দুর্দান্ত খেলছে আমাদের দল। কিন্তু পরে দেখা যাচ্ছে র্যাঙ্কিং-এ ফল ভিন্ন। এ রকম একটা উদাহরণ ফ্রান্স। দুর্দান্ত ফেলেছে ফ্রেন্ডলি এবং বাছাইপর্বের ম্যাচগুলো। কিন্তু ইউরোতে একটা ম্যাচ ড্র এবং শেষ দুটো ম্যাচ হেরেছে যা তাদের জন্যে অনেক ভারী পড়েছে। মনে রাখতে হবে, ৬ টা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হারলে যে পরিমাণ পয়েন্ট হারানো সম্ভব, তার থেকে বেশি পয়েন্ট ইউরোর দুইটা ম্যাচে হারায় একটা দল। Importance ফ্যাক্টর এর ইমপোর্টেন্স কম নয় কিন্তু!
আবার কেউ কেউ বলছে, ইংল্যান্ড ৬ থেকে ৪ এ গেলো কেমন করে? উত্তর সহজ। এবারের ইউরোতে ইংল্যান্ড কোন ম্যাচ হারে নি। কোয়ার্টার ফাইনালে ইটালির বিপক্ষে টাইব্রেকারে হারটা আসলে ড্র (আগেই ব্যাখ্যা করেছি এ বিষয়টা)।
আরেকটা কথা বলে শেষ করি। ফিফার ওয়েব সাইটটা কিন্তু দারুন ইন্টারএ্যাকটিভ। কোন দলের খেলা বাকি থাকলে সেখানে আপনি সম্ভাব্য ফল বসিয়েও র্যাঙ্কিং ক্যালকুলেট করতে পারবেন। আমি ইউরো চলার সময় বসে বসে করতাম। তবে এখনই ফিফার সাইটে ঝাঁপ দিয়ে লাভ নেই। বড় দলগুলোর সম্ভাব্য কোন খেলা এই মুহূর্তে নেই। তেমন উপলক্ষ্য তৈরি হলে সেই দলের পেইজে ডেটা ইনপুট দেয়ার ফিল্ডও তৈরি হয়ে যাবে। তখন সেখানে ইনপুট দিয়ে দিয়ে সম্ভাব্য র্যাঙ্কিং তৈরি করার খেলায় মেতে উঠতে পারেন।
অতএব, এই ছিল র্যাঙ্কিং বিষয়ক “কিছু কথা”। যার মূল বক্তব্য হচ্ছে, গাঁজা খেয়ে এই র্যাঙ্কিং কেউ করে নি। আর করলেও তাতে ফলের কোন পার্থক্য হবে না।
Post a Comment