0
 (মূল লেখক: আসিফ-মতিন, সচালয়তন)

আমি দিনের চেয়ে রাতে ছবি তুলতে পছন্দ করি বেশি, রাতের আলো টালো নিয়ে অনেক সময় অনেক মজার মজার প্যাটার্ন তৈরি করা যায়, রং ঝলমলে সাইন, ডিসপ্লে এগুলার ছবি তুলতেও আমি বেশ মজা পাই। তবে আজকের প্রধান বিষয় হল আতশবাজি বা ফায়ারওয়ার্কস। প্রথমে ছবি গুলো দেখে ফেলি,
কাতার জাতীয় দিবসের আতশবাজি, ২০১০ (প্রথম চেষ্টা )
যন্ত্রপাতি: ক্যানন ৪৫০ ডি, ১৮-৫৫ কিট লেন্স, ট্রাইপড।
(১)

(২)

(৩)

‘কাতারা’ ঈদ উৎসব ২০১১ (২য় প্রচেষ্টা)
যন্ত্রপাতি: ক্যানন ৪৫০ ডি, ১৮-৫৫ কিট লেন্স, ট্রাইপড নেই নাই কারণ এই জিনিস যে হবে জানতাম না! পরে হাত দিয়াই তুলতে হইল।
(১)

(২)

(৩)

(৪)

ইংরেজি নববর্ষ ২০১৩, সিডনি হারবার ব্রিজ
যন্ত্রপাতি: নাইকন ডি৭০০০, ১৮-১০৫ কিট লেন্স, ট্রাইপড
(১) শুরুর আগে আগে

(২)

(৩) শুরু

(৪)

(৫)

আচ্ছা এবার আসি কারিগরি কথাবার্তায় (এখানে ডিএসএলআর বা ম্যানুয়াল অপশন আছে এরকম কম্প্যাক্ট ক্যামেরা নিয়ে কথা বলা হবে, তাই সিম্পল পয়েন্ট-শুট ওয়ালা ভাইরা রাগ কইরেন না), এরকম বা এরচেয়েও হাজার গুণ ভাল ছবি কিভাবে তুলবেন? প্রথম উত্তর হতে পারে ‘প্র্যাকটিস’, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ফায়ারওয়ার্কস জিনিস টা ঘন ঘন হয়না। যাই হোক কিছু নিয়ম কানুন আছে যেগুলা মোটামুটি মনে রাখলে ভাল কিছু ছবি পাওয়া উচিৎ। আসেন নিয়মগুলো নিয়ে একটু গুঁতাগুঁতি করি।
১) ছবি কোথায় দাঁড়ায় তুলবেন: এইটা একটা অতিব গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ফায়ারওয়ার্কস এমন একটা জিনিস যেটার টাইট ক্যাপচার তেমন ভাল লাগেনা (অন্তত আমার কাছে), আশে পাশে উপর নিচে যত বেশি জায়গা ফ্রেমে আনতে পারবেন তত ভাল। আরো খেয়াল রাখতে হবে যাতে ক্যামেরা আর আতশবাজির মাঝখানে উঁচু গাছ, দালান বা কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকে, তাহলে ছবি ভাল আসবেনা। উপরে আমার প্রথম সেট দেখেন, এই ফায়ারওয়ার্কস হয়েছিল কর্নিশে, আমি ছিলাম তার উল্টা দিকে আল বিদা পার্কে একটা টিলার উপরে, কিন্তু মাঝে পড়ে গেল কিছু গাছ, ফলাফল চলনসই ছবি। যাই হোক এখন গুগল করলেই কোন্ ফায়ারওয়ার্কসের জন্য কোন্ কোন্ স্পট ভাল সেটা পা্ওয়া যায়, তাই ওরকম স্পট বাছাই করে আগে আগে গিয়ে জায়গা দখল করেন। আগে থেকে ফ্রেমিং করে রাখলে খুব ভাল, সেইক্ষেত্রে তুলার সময় শুধু টিপ দিবেন, ভিউফাইন্ডারে না দেখে বেশিরভাগ সময় সরাসরি তাকিয়ে ফায়ারওয়ার্ক্স উপভোগ করতে পার্বেন।
২) ট্রাইপড: এটা অবশ্যই লাগবে, নাহলে চোখা (sharp) আর মচমচে (crisp) ছবি পাবেন না। ছবি তুলতে হবে লং এক্সপোজারে, তাই যেকোন রকমের লাড়া খাইলেই আলোক রশ্মিগুলা একটু মোটামোটা আসবে, নাইলে ব্লার হবে ইত্যাদি ইত‌্যাদি। আরো ভাল হয় যদি রিমোট বা শাটার রিলিজ কেবল থাকে, কারণ শাটার টিপাটিপি করতে গিয়েও অনেক সময় ক্যামেরা ভাল রকম লাড়া খায়। আরেকটা বুদ্ধি আছে, শাটারে ২ সেকেন্ড ডিলে দিয়ে রাখা, সেই ক্ষেত্রে আপনার ছবি তুলার গতি ধীর হবে, বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং মুহূর্ত মিস হয়ে যেতে পারে।আমার রিমোট বা কেবল কোনটাই নাই, ডিলে দিয়াও তুলিনা, খালি ট্রাইপড টা টাইট করে বসায় রাখি, হাতের স্ট্যাবিলিটি? প্র্যাকটিস প্র্যাকটিস! উপরে ২ নাম্বার সেটে আমার সাথে ট্রাইপড ছিলনা, পার্থক্য দেখতেই পাচ্ছেন!
(৬)

৩) ফোকাল লেংথ? এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে ওয়াইডার ফোকাল লেংথ। এমন হতে পারে যে আপনার মনে হল কোন একটা জায়গায় একটা টাইট বা লং ফোকাল লেংথের শট নেয়া দরকার, নিলে দুর্দান্ত একটা ছবি হত, সেই ক্ষেত্রে বলে রাখি ক্রপ কিন্তু আপনি পোস্ট প্রসেসিংয়ের সময়ও করতে পারবেন।
২য় প্রশ্ন ফোকাস কি করে করব? অটো ফোকাস ব্যবহার না করাই উত্তম। একে তো অন্ধকার রাত তার উপর একেকবার আলোর উজ্জ্বলতা হবে একেক রকম, বাজি সবসময় এক জায়গা দিয়েই ফুটবে তার কোন গ্যারান্টি নাই। অটো ফোকাস থাকলে ক্যামেরা ফোকাস করতে অনেক সময় নিবে, আপনাকেও ফোকাস পয়েন্ট বার বার পরিবর্তন করতে হতে পারে, বেশি সুবিধার না ব্যাপারটা ‌তাই না? এইজন্য এইবেলা ম্যানুয়াল ফোকাসই ভরসা। দুইভাবে করতে পারেন ম্যানুয়াল ফোকাসিং। অনেক লেন্সে ফোকাস রিংয়ের জন্য একটা ডিসপ্লে থাকে, আপনার লেন্স ঐরকম হলে ফোকাস রিং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেন একটা ‘ইনফিনিটি’ চিহ্ন পাবেন, ফোকাস ওইখানে এ্যালাইন করেন। কিট লেন্সে সাধারণত এই ডিসপ্লে থাকেনা, তাই যাদের লেন্সে এই সুবিধা নাই তারা হতাশ হবেন না। প্রথমে লেন্স ওয়াইড এ্যাংগেলে নেন, যেমন ১৮ মিমি। তারপর অনেক দূরের কোন ল্যান্ডস্কেপে ফোকাস করেন, এইক্ষেত্রে লেন্স তার কাছাকাছি কোন জিনিসে যেহেতু ফোকাস করতে পারবেনা, সে ‘ইনফিনিটি’ ফোকাসে চলে যাবে। এখন এই ফোকাস টা ফিক্সড করে রাখেন, মনে রাখবেন ফোকাল লেংথ পরিবর্তন করলেই কিন্তু ফোকাস নষ্ট হয়ে যাবে এবং সেই ক্ষেত্রে আবার আপনাকে ফোকাস ইনফিনিটি তে টিউন করতে হবে।
(৭)

৪) কোন্ মোড? ম্যানুয়াল মোডই সর্বোত্তম। এ্যপারচার আর শাটার স্পীড দুইটাই লাড়াচাড়া করতে হতে পারে। ছবি তুলবেন লং এক্সপোজারে (শাটার স্পীড কম), কিন্তু কতটা লং সেটা আপনার ইচ্ছা। তুলনামূলক বেশি লং এক্সপোজারে আলোর তৈরি নারকেল গাছাকৃতির অবয়ব পাবেন, কম হলে ফুলাকৃতি/ ডান্ডাকৃতি অবয়ব পাবেন। শাটার স্পীডের সাথে এ্যপারচার এ্যাডজাস্ট করে নিতে হবে যাতে ছবি জ্বলে না যায়, আর কতটুকু ডেপথ অফ ফিল্ড বা ডি ও এফ রাখবেন সেটাও এ্যপারচারের জন্য একটা ডিসাইডিং ফ্যাক্টর। রিকমেন্ডেড রেঞ্জ F8- F16
** মনে রাখবেন শুরু হওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যে আকাশ ধোঁয়ায় ভরে যায়, তাই তখন একই শাটার স্পীডে এ্যপারচার একটুও না কমালে ছবি অনেক ধোঁয়া ধোঁয়া আসবে।
(৮)

৫) আই এস ও: সর্বনিম্ন রাখেন, ১০০-২০০, এর বেশি না।
৬) ফ্ল্যাশ? কোন দরকার নাই।
এছাড়া সারাক্ষণ ভিউফাইন্ডারে তাকিয়ে থাকার দরকার নাই, কয়েকটা শট নেন, দেখেন ঠিকঠাক আছে কিনা, দরকার মনে হলে কিছু টিউনিং করেন, তারপর তুলতে থাকেন। প্রত‌্যেকটা ছবি তুলার পর চেক করে দেখারও দরকার নাই, তাহলে অনেক কিছু মিস করার সম্ভাবনা থাকে। মাঝে মধ্যে চেক করেন যাতে কোন ভুল চুক হলেও ঢালাও সব ছবি খারাপ না আসে।
সবশেষে বলি নিজের চোখ দিয়া দেখার আনন্দ আর কোন কিছুতে নাই! হ্যাপি ক্যামেরাবাজি সবাইরে।

YOUR NAMEAbout Me
আসসালামু আলাইকুম। নবীন বাংলা ব্লগ সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম। আসলে এই ব্লগ সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এবং আমি এই সাইটের এডমিন, মূলত ব্লগিং প্রাকটিস এবং মুক্ত জ্ঞাণ চর্চার জন্যই এই সাইটটি ওপেন করেছি। আমার সাইটের পোস্টগুলো অন্যান্য সুনাম খ্যাত ব্লগ সাইটে সমূহে পাবলিশ করে থাকি তথারুপ টেকটিউন্স, টিউনারপেইজ। ইনশাআল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব নবীন বাংলা ব্লগে লেখালেখি করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে অন্যান্য লেখকদের বাছাই করা পোস্টগুলো পাবলিশ করা হয়। এবং ইচ্ছা করলে আপনিও এই ব্লগের অতিথি লেখক হিসাবে শুরু করতে পারেন।পরিশেষে আমার সাইট কিংবা প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে কোন আপনাদের অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহন করা হবে। আবারো ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সবাইকে!!
Follow : | | Facebook | Twitter

Post a Comment

 
Top