বাংলাদেশ বিমানের বহর থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে ডিসি-১০ উড়োজাহাজ। আগামী ২০ ফ্রেব্রুয়ারি শেষবারের মত উড়বে এটি। ৩১৪ আসনের এ উড়োজাহাজটি তার শেষযাত্রায় যাবে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিমানবন্দর।
মঙ্গলবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ তথ্য জানিয়েছে। ডিসি-১০ -এর স্থলাভিষিক্ত হবে নতুন কেনা তৃতীয় বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল পরিবর্তনকে বলে, “ডিসি-১০ এর শেষ ফ্লাইটে আমরা বিমানের যাত্রীদের ভ্রমণের সুযোগ দিতে চাই। বার্মিংহামের আকাশে তাদের বিশেষ ভ্রমণ করানো হবে।”
মঙ্গলবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ তথ্য জানিয়েছে। ডিসি-১০ -এর স্থলাভিষিক্ত হবে নতুন কেনা তৃতীয় বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেভিন স্টিল পরিবর্তনকে বলে, “ডিসি-১০ এর শেষ ফ্লাইটে আমরা বিমানের যাত্রীদের ভ্রমণের সুযোগ দিতে চাই। বার্মিংহামের আকাশে তাদের বিশেষ ভ্রমণ করানো হবে।”
বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা খান মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকা-বার্মিংহাম ফ্লাইটের পর ডিসি-১০ উড়োজাহাটিকে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো একটি এভিয়েশন জাদুঘরে পাঠানো হবে।
কোন জাদুঘরে পাঠানো হবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ঠিক কোন জাদুঘরে পাঠানো হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।”
বিমানের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অবস্থিত বোয়িং কোম্পানির দ্য মিউজিয়াম অব ফ্লাইটের সংগ্রহশালায় উপহার হিসেবে ডিসি-১০ উড়োজাহাজটি পাঠাবে বিমান কর্তৃপক্ষ। তবে উপহার হিসেবে দেয়ার আগেই উড়োজাহাজটির ইঞ্জিনসহ মূল্যবান যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হবে।
ডিসি-১০ উড়োজাহাজটির বিদায়ী ফ্লাইট সম্পর্কে বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সিইও ড. আব্দুল মোমেন পরিবর্তনকে বলেন, “ডিসি- ১০ যখন বাংলাদেশ বিমানে সংযোজিত হয়, সে সময় একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের এ্যাভিয়েশন সেক্টরের জন্য একটি অভাবনীয় সাফল্য ছিল। এটি বিমানের যাত্রী পরিবহনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। আমি খুশি হবো যদি এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অবস্থিত বোয়িং কোম্পানির দ্য মিউজিয়াম অব ফ্লাইটের সংগ্রহশালায় পাঠানো হয়। কারণ সেখানে এটি বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আরো উজ্জ্বল করবে।”
এ পর্যন্ত বিমানের বহরে মোট চারটি ডিসি-১০ উড়োজাহাজ যাত্রী পরিবহন করেছে। এর মধ্যে দুটি উড়োজাহাজ অনেক আগেই গ্রাউন্ডেড (পরিত্যক্ত) হয়েছে। বাকি দুটির মধ্যে একটির মেয়াদ শেষ হয় গত নভেম্বরে।
দীর্ঘ সময় ধরে সুপরিসর ডিসি-১০ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দূরপাল্লার গন্তব্যের প্রধান ভরসা ছিল। বহরকে শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে ১৯৮৩ সালে ম্যাকডোনাল-ডগলাস কোম্পানির কাছ থেকে তিনটি ডিসি-১০ কেনে বিমান। পরে ১৯৮৯ সালে চতুর্থ ডিসি-১০ উড়োজাহাজটি কেনা হয়। এরপর আরো একটি ডিসি-১০ উড়োজাহাজ লিজে যাত্রী পরিবহনের জন্য আনা হয়।
এক নজরে ডিসি-১০
ম্যাকডোনাল-ডগলাস ডিসি-১০। ১৯৭১ সালে প্রথম আমেরিকান এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে তিন ইঞ্জিন বিশিষ্ট বিশালাকার এই বিমান। সে সময় বোয়িং-৭৪৭-এর চেয়ে ছোট এবং তুলনামূলক কম দৈর্ঘ্যের রানওয়েতেই টেক-অফ ও ল্যান্ডিং করতে সক্ষম বলে এ উড়োজাহাজের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী।
তবে ডিসি-১০ এই উড়োজাহাজটির ইতিহাসে লেগে আছে বেশ কিছু কালো অধ্যায়। একাধিকবার এটি শিকার হয়েছে বড় ধরনের দুর্ঘটনার। এর মধ্যে ১৯৮৯ সালের শিকাগোর একটি এয়ারপোর্টে ঘটা দুর্ঘটনাটি অন্যতম। মাটি ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইঞ্জিনজনিত গোলযোগের কারণে বিমানটি ফের মাটিতে আছড়ে পড়ে। এমনই বেশ কিছু দুর্ঘটনার কারণে বিমানযাত্রীদের মধ্যে ডিসি-১০ নিয়ে ভীতির সৃষ্টি হয়। সেবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) দেশজুড়ে সব ডিসি-১০ বিমানের উড্ডয়ান ও অবতরণ বন্ধ রাখে।
১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দুই উড়োজাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ম্যাকডোনাল এয়ারক্রাফট করপোরেশন ও ডগলাস এয়ারক্রাফট কেম্পানি একীভূত হওয়ার পর প্রথম ডিসি-১০ উড়োজাহাজ তৈরি করে। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এর উত্পাদন অব্যাহত ছিল। প্রায় ৩৮৬টি যাত্রীবাহী ডিসি-১০ বিভিন্ন দেশে রফতানি করে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্যও ডিসি-১০ উড়োজাহাজ তৈরি করে তারা। ১৯৯০ সালে ম্যাকডোনাল-ডগলাস ও বোয়িং কোম্পানি একীভূত হয়।

Post a Comment