0
( মূল লেখক: গেষ্ট রাইটার, সচলায়তন ব্লগ)
পুন্তা দেল এস্ত নামের মানে EAST POINT, রাজধানী মন্টেভিদেও থেকে ১৪০ কিলোমিটার পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরের তীরবর্তী এই শহর উরুগুয়ের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র। ৭০০০ স্থায়ী অধিবাসীর সাথে গ্রীষ্মকালে আরো যোগ হয় ১৫০,০০০ টুরিস্ট। আমি এখানে কলোনিয়াল বা এন্টিক কিচ্ছু দেখিনি। সব নতুন, ঝক্ঝকে তকতকে ভাব। গিয়েছিলাম ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এক্কেবারে পিক ট্যুরিস্ট সিজনে। মন্তেভিদেও থেকে সুপার হাইওয়ে সোজাসুজি চলে গেছে পুন্তা দেল এস্তে। নেই কোনও গাড়ির সারিবদ্ধ লাইন, এযেন ড্রাইভিং এর স্বর্গ। মাঝে মাঝে হুস করে চলে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল আর প্যারাগুয়ের নব্য ধনীদের চকচকে ফোর হুইল ড্রাইভ। রাস্তার পাশের ল্যান্ডসকেপ অনেক সুন্দর।

হাইওয়ে

মারাদোনা প্রেমীদের জন্য

হাইওয়ের পাশে

হাইওয়ের পাশে
দিনের তাপমাত্রা ছিলো ৩০ ডিগ্রীর কোঠায়, চমত্কার আবহাওয়া, বীচ অনেক পরিস্কার, হুটকো ফেরিওয়ালার ঝামেলা নেই। একজনকে পেয়েছিলাম, যিনি মেইড ইন ইন্ডিয়া ফতুয়া আমার কাছে বেচতে এসেছিলেন। আসলে উনি আমার গাত্র বর্ণের কারনে ব্রাজিলিয়ান ট্যুরিস্ট ভেবেছিলেন, পরে আমার আসল পরিচয় জানতে পেরে টাসকি খেয়েছিলেন।

ফেরিওয়ালা
সাগরের পানি কিন্তু অনেক ঠান্ডা। আসলে ল্যাটিন আমেরিয়ান টুরিস্টদের কাছে একহাতে পত্রিকা আর অন্যহাতে মাতে(MATE) নিয়ে বীচে রোদ পোহানোটাই বড় ব্যাপার। এখন আপনাদের বলব মাতে জিনিসটা কি?

মাতে(MATE) ছবি উইকি
এককথায় মাতে হল উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা আর প্যারাগুয়ের জাতীয় ড্রিঙ্ক। এদের মাতে কালচার নিতেই একাধিক পোস্ট লিখা যায়। অনুসন্ধানী পাঠক এই লিঙ্কে বিশদ জানতে পাড়বেন
http://en.wikipedia.org/wiki/Mate_(beverage)
ছবিতে যেমন দেখছেন এ হল অতি গরম পানির সাথে মেশানো মাতে পাতার গুঁড়ো। তাই straw টা প্লাস্টিকের নয়, সিলভারের। আমার কাছে পাতলা ফিকে চায়ের মতো লেগেছে, আহামরি কিছু না। এরা মাতে হাতে নিয়ে বাজারে যায়, অফিসে যায় এমনকি আমি গির্জাতেও মাতে দেখেছি। যেকোনো পেট্রোল পাম্পে ফ্রি গরম পানি পাওয়া যায়, সাগর পাড়েও ফ্লাস্কে গরম পানি বেচতে দেখেছি। বীচে মাখন মেশানো সিদ্ধ ভুট্টা পাওয়া যায়, মজার আইটেম।
পুন্তা দেল এস্ত ঘুরে দেখার জন্য নিলাম ডিলাক্স সিটি টুর বাস, যাত্রী আমি ছাড়া সব ব্রাজিলিয়ান, তাই গাইড শুরু করে তার পর্তুগিজ ধারাবিবরণী! আমি জানালা দিয়ে দেখি সারি সারি সুউচ্চ হোটেল, ক্যাসিনো, শপিং কমপ্লেক্স, রেস্তোরা, বার-পাব , ভালো লাগে আটলান্টিকের ঢেউ আর বাতিঘর।

Conrad hotel and Casino

fingers sclupture (wiki pic)

বাতিঘর ছবি উইকি

Maldonado bridge
মাঝে বাস থামে বন্দরে, হেঁটে বেড়াই নিজের মত আর তখনি দেখা মিলে ঝিমুতে থাকা এই বিশাল প্রাণীর!

সী-লায়োন

এক জোড়া সী-লায়োন
গাইড জানালো ওরা আসে ১২ কিলোমিটার দুরে সাগরেরে এক দ্বীপ থেকে, নাম isla de lobos সী-লায়োন এর দ্বীপ। অনেক আছে ওখানে, সংখায় ১৮০,০০০। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম যাব ওই দ্বীপে। গাইড বলল ওটা বেশ খরুচে প্যাকেজ কিন্তু সব নির্ভর করে সাগরের ওপর, উত্তাল সাগরে কোনো জাহাজী ওখানে যাবে না। আমি যেতে পেরেছিলাম, অতুলনীয় সেই অভিজ্ঞতা।
গাইড এরপর সবাইকে বাসে উঠিয়ে নিয়ে চললো রেসিডেনসিয়াল এরিয়া দেখাতে, সাগরের পাড়ে সব ভিলা বাড়ি, গাইড উত্সাহের সাথে দেখাতে লাগলো এইটা rayban সানগ্লাসের মালিকের ভিলা, ঐটা পিট্ সাম্প্রাস্সের বাড়ি। ব্রাজিলিয়ানরা বেশ মজা পাচ্ছে, একের পর এক ফটো তুলছে আর আমার পাচ্ছে ঘুম! আমি থাকি বাবা দুরুমের ভাড়া বাসায়, বড়লোকের বিলাসিতা দেখে আমার কি লাভ?
সন্ধা প্রায় হয়ে আসছে, বাস চলে এলো একটু নির্জন এলাকায়। বাস থেকে নেমে দেখি আরো অনেক টুরিস্ট বাস থেমে আছে। একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি আমি দাড়িয়ে আছি এক পাহাড়ের উপর আর আমার সামনে গোধুলির অপরূপা আটলান্টিক মহাসাগর। জায়গার নাম punta balena মানে whale point। তিমির পরিব্রাজন দেখা যায় এখান থেকে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে। আমার মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় পড়া সেবা প্রকাশনীর তিমির প্রেম বইটির কথা।

Whale point ছবি উইকি
আমি তিমি দেখেনি কিন্তু দেখেছি আটলান্টিকে সূর্যাস্তের মুহূর্ত casapueblo এর বারান্দা থেকে। মেডিটেরিয়ান স্থাপত্য কলার এই বাড়িটির মালিক উরুগুয়ের বিখ্যাত আর্টিস্ট Carlos Paez Vilaro। এখানে আছে আর্ট গ্যালারি, মিউজিয়াম, হোটেল আর রেস্টুরেন্ট। পুন্তা দেল এস্তের সব ট্যুরিস্ট বাস সূর্যাস্তের আগে এখানে এসে থামে। পর্যটকরা বাড়িটি ঘুরে দেখে আর সবশেষে এর অনেক গুলো ছোট বড় বারান্দা থেকে উপভোগ করে আটলান্টিক মহাসাগরের সূর্যাস্ত। আর এভাবেই শেষ হয় আমার সিটি ট্যুর।

casapueblo

casapueblo (google pic)

আটলান্টিক মহাসাগরের সূর্যাস্ত
পরেরদিন আমি আবার ছুটে যাই বন্দরে জাহাজির খোঁজে, আমাকে তো যেতেই হবে ঐ সি-লায়নদের দ্বীপে। পেয়েও যাই একজনকে, সাথে থাকবে মেক্সিকান টুরিস্ট গ্রুপ। জাহাজ ছাড়বে পরেরদিন। আর সেই অভিযানের গল্প বলবো পরের কিস্তিতে।

YOUR NAMEAbout Me
আসসালামু আলাইকুম। নবীন বাংলা ব্লগ সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম। আসলে এই ব্লগ সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এবং আমি এই সাইটের এডমিন, মূলত ব্লগিং প্রাকটিস এবং মুক্ত জ্ঞাণ চর্চার জন্যই এই সাইটটি ওপেন করেছি। আমার সাইটের পোস্টগুলো অন্যান্য সুনাম খ্যাত ব্লগ সাইটে সমূহে পাবলিশ করে থাকি তথারুপ টেকটিউন্স, টিউনারপেইজ। ইনশাআল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব নবীন বাংলা ব্লগে লেখালেখি করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে অন্যান্য লেখকদের বাছাই করা পোস্টগুলো পাবলিশ করা হয়। এবং ইচ্ছা করলে আপনিও এই ব্লগের অতিথি লেখক হিসাবে শুরু করতে পারেন।পরিশেষে আমার সাইট কিংবা প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে কোন আপনাদের অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহন করা হবে। আবারো ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সবাইকে!!
Follow : | | Facebook | Twitter

Post a Comment

 
Top