0

এই মুহুর্তে যদি আপনি যদি প্রশ্ন করা হয় , বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটা শক্তিশালী সেনাবাহিনীর নাম বলুন দেখি ,আপনি হয়তো বলবেন আমেরিকা ,রাশিয়া , চীন ,ভারত , যুক্তরাজ্য ইত্যাদি। উপরোক্ত দেশগুলি হয়তো প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার জন্য নানাবিধ মারনাস্ত্রের অধিকারী । কিন্তু একটা সময় ছিলো যখন প্রযুক্তি এতটা উন্নত ছিলোনা , ছিলোনা কোন দূরপাল্লার অস্ত্র , যুদ্ধ করতে হতো সরাসরি , কোন স্বয়ংক্রিয় মারনাস্ত্রের সাহায্যে নয় বরং সাহস , কৌশল এবং ক্ষীপ্রতার মাধ্যমেই প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে হতো । আজ আপনাদের সাথে সেইসব সাহসী কিছু যোদ্ধাদের কথা শেয়ার করবো।

নাইট (Knight)
অনেকের মতে তারাই শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা , তাদের বিচরন ক্ষেত্র ছিলো মধ্য ইউরোপ । যাদের প্রশিক্ষন ব্যবস্থা ছোটবেলা থেকে শুরু হতো , একজন সাধারণ মানুষকে নাইটের উপাধি পেতে হলে তাকে অনেক নিয়ম কানুন এবং কঠোর প্রশিক্ষনের মধ্যদিয়ে যেতে হতো , নাইটদের প্রধান কাজ ছিলো রাজাকে রক্ষা করা । যুদ্ধক্ষেত্রে নাইটদের পরাজিত করা প্রায় অসম্ভব ছিলো , এর কারন তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত লৌহ বর্ম দ্বারা আবৃত থাকতো । ঘোড়া ব্যবহার করে অত্যন্ত ক্ষীপ্রতার সাথে আক্রমন করা নাইটদের অন্যতম বৈশিষ্ট ছিলো।

স্পার্টানস (Spartans)


300 সিনেমার বদৌলতে আমরা সবাই কমবেশী এই যোদ্ধাদের সম্পর্কে জানি । যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের মূল অস্ত্র ছিলো তরবারী এবং ঢাল । নাইটদের মত তারা সারা শরীর বর্ম দিয়ে আবৃত রাখতো না । স্পার্টানদের স্লোগান ছিলো : “come back with the shield or on top of it” । যার অর্থ তুমি কেবল তখনই ফিরে আসবে , যদি তুমি জয়ী হতে পারো । 

ভাইকিংস (Vikings)
তারা ছিলো ইউরোপের ত্রাশ , অন্যান্য যোদ্ধাদের থেকে থেকে এদের অন্যতম পার্থক্য হলো শারীরিক ঘটন , এরা সবাই অনেক লম্বা এবং চওড়া ছিলো , এদের প্রধান অস্ত্র ছিলো কুড়াল । এমনকি এই সম্প্রদায়ের ধর্মও আবর্তিত হতো যুদ্ধকে ঘিরে ।

নিনজা (Ninja)

এরা মূলত কৃষক ছিলো , লুন্ঠনকারী সামুরাইদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য এরা একধরনের কৌশল আবিস্কার করে, যেটা মূলত ট্রেডিশনাল কুংফুর একধরনের সংস্করন । নিনজাদের সবথেকে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো এরা স্টীলথ ফাইটার , অর্থাৎ আপনি তাদের উপস্থিতির টের না পেয়ে ,আপনি তাদের আক্রমনের শিকার হতে পারেন । তরবারী , ব্লোগান , নিনজা স্টার , তাদের অন্যতম ব্যবহৃত অস্ত্র।

সামুরাই (Samurai)

আমরা সবাই কমবেশী এদের নাম জানি , এদেরকে নাইটের জাপানী রূপ বললে ভুল হবে না। এরা খুব নৃশংশ ছিলো , এদের অন্যতম ব্যবহৃত অস্ত্র ছিলো ,এক ধরনের ধারালো তরবারী । একই সাথে এরা জাপানী মার্শাল আর্টে (কারাতে) দক্ষ ছিলো , কালের বিবর্তনে এরা হয়তো নেই । কিন্তু তাদের ব্যবহৃত তরবারী আজও আছে , যেটা কাতানা(katana) নামে পরিচিত । এটা কোন সাধারণ তরবারী না , এটা চালনা করতে হলে আপনার প্রয়োজন বিশেষ প্রশিক্ষন , একটু ভুল এমনকি তরবারীটাকে খোলস থেকে বের করার সময়ও যদি অসতর্ক হন , আপনি দুর্ঘটনার মধ্যে পড়তে পারেন , আমাদের দেশে মাত্র একজন ব্যাক্তি আছে যে কিনা এই সামুরাই চালাতে দক্ষ।
অ্যাপাচী (apache)
এদেরকে নিনজার আমেরিকান ভার্সন বলা হয়। এদের মূল অস্ত্র ছিলো ছুড়ি , খালি হাতে যুদ্ধের জন্য এদের কোন তুলনা হয়না । বর্তমানে অনেক দেশের সৈনিকদের খালি হাতে যুদ্ধের জন্য অ্যাপাচীদের কৌশল শেখানো হয়।
মঙ্গোলীয়ান
ই পৃথিবীর বুকে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ সাম্রাজ্যের গড়ে তুলেছিল এই মঙ্গোলীয়ানরা , ইউরোপ থেকে এশিয়া সর্বত্রই এদের বিচরণ ছিলো , জাতি হিসেবে মঙ্গলরা ভবঘুরে ছিলো এবং তারা এত পরাক্রমশালীও ছিলোনা , যতদিন না চেঙ্গিস খান তাদের নেতৃত্বে এসেছিলো ।
এই চেঙ্গিস খানের অসাধারণ নেতৃত্ব এবং সাহসের জন্যই মঙ্গোলরা তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পেরেছিলো ।


 মঙ্গোলরাই সর্বপ্রথম দলে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধ করেছিলো , তাদের প্রতিটি দলে ১০-১০০ জন সৈন্য থাকতো ,আবার এইরকম আরও ছোট ছোট গ্রুপ নিয়ে হতো আরেকটি বড় গ্রুপ ,প্রতিটি দলের একজন করে দলপতি থাকতো ।
মঙ্গল যোদ্ধাদের সাফল্যের অন্যতম কারন ছিলো তাদের যুদ্ধ কৌশল , তারা অস্ত্র হিসেবে ঢাল ,তলোয়ার এবং তীর ব্যবহার করতো । মঙ্গোল তীরন্দাজরা ছিলো অত্যন্ত দক্ষ ,তাদের নিশানা ছিলো নির্ভুল । যেকোন যুদ্ধের সময় তাদের তীরন্দাজরা বিপক্ষদলের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে সমর্থ ছিলো , অনেক দূর থেকে একসাথে অনেক তীরের মাধ্যমে তারা বিপক্ষ দলকে বিশৃঙ্খল করে দিতে ।
মঙ্গল যোদ্ধাদের ঘোড়া গুলো সাধারণত ছোট প্রকৃতির হতো , ছোটা ঘোড়ার সুবিধা হিসেবে যোদ্ধারা খুব সহজেই তাদের ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো ।
মঙ্গোল যোদ্ধারাও বর্ম ব্যবহার করতো , তবে তাদের সেই বর্মগুলো নাইটদের মত এত ভারী ছিলোনা , এবং তাদের বর্ম শুধু বুক এবং পিঠকে রক্ষা করতেই ব্যবহার হতো ।

সাওয়ালীন সন্ন্যাসী
সাওয়ালীন সন্ন্যাসীদের ইতিহাস অনেক পুরানো ,তারাই এই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মার্শাল আর্টের প্রচলন করে । আনুমানিক ৫৪০ খ্রিস্টাব্দে ভারত বর্ষ থেকে এক বৌদ্ধ ষণ্মাসই চায়নাতে যায় ,রাজার সাথে দেখা করার জন্য ,চীনা ভাষায় সেই সন্ন্যাসীর নাম ছিলো ট্যামো । সেইসময় চীনে একটা মন্দিরে (পরবর্তীতে সাওয়ালীন মন্দির) সরাসরি রাজার তত্ত্বাবধানে বৌদ্ধ ধর্মের বানীগুলো সংস্কৃত থেকে চাইনিজ ভাষায় অনুবাদ করার কাজ চলছিলো । একটা সময় চাইনিজ রাজার সাথে ,ট্যামোর বিরোধ হয় । রাজার ধারনা ছিলো অন্যের কাজের মাধ্যমে যদি তার উদ্দেশ্য সফল হয় তবেই তিনি বোধি লাভ করতে পারবেন , ট্যামো এর বিরোধিতা করে , ট্যামোর মতে বোধি লাভের জন্য সবসময় নিজেকেই কাজ করতে হবে । এই বিরোধিতার জন্য ট্যামো রাজদরবার থেকে চলে যান , এবং মন্দিরে গিয়ে তার এই মতবাদ বোঝানোর চেস্টা করেন , কিন্তু অন্যান্য সন্ন্যাসীরা তার এই মতবাদ প্রত্যাখ্যান করেন , তখন ট্যামো একটি গুহায় ধ্যান শুরু করেন , কথিত আছে এই ধ্যানের মাধ্যমেই তিনি অলৌকিক কিছু দেখাতে পারেন এবং যার ফলস্বরূপ অন্যান্য সন্ন্যাসীরা তার মতবাদ মেনে নেয় ।
ট্যামো একসময় লক্ষ্য করলেন , মন্দিরের অধিকাংশ সন্ন্যাসীরাই খুব রুগ্ন । তারা বৌদ্ধের প্রচারিত যোগাসন করতে সমর্থ নন ।সন্ন্যাসীদের শক্তি এবং সাহস বৃদ্ধির জন্য এক বিশেষ ধরনের শরীর চর্চা কৌশল উদ্ভাবন করেন যেটা কিনা কিছু প্রাণীর চাল চলন অনুকরণে করা হয়েছিলো ।
বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সেই মন্দির ছিলো জংগলের ভিতরে যার ফলে তারা প্রায়ই বন্য পশু এবং ডাকাতদের হামলার শিকার হতো । ধীরে ধীরে ট্যামোর প্রচলিত শরীর চর্চার কৌশলগুলো তারা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করা শুরু করলো ।
এভাবেই মূলত মার্শাল আর্টের উদ্ভব হয়েছিলো , প্রথম দিকে তারা কোন অস্ত্র ব্যবহার করতোনা , কিন্তু কালের পরিক্রমায় তারা বেশ কিছু অস্ত্রের ব্যবহারও শুরু করে যেমনঃ লাঠি , বর্ষা ,চেইন স্টিক ইত্যাদি । সাওয়ালীন সন্ন্যাসীদের কৌশল যেমন উন্নত তেমনি তাদের শারীরিক গঠন । শুধু অস্ত্র বা মারামারির কৌশল শেখা নয় , যোগ ব্যায়াম তাদের প্রশিক্ষণের অন্যতম অংশ । 
 হুন
এশিয়া এবং ইউরোপের বেশীরভাগ জায়গায় এদের বিচরন ছিলো , বলতে পারেন ত্রাস । হুন নেতা আতিলার নেতৃত্বে তারা তাদের সাম্রাজ্য ইউরোপ থেকে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিলো । হুনদের অন্যতম ভয়ংকর অস্ত্র ছিলো তাদের তৈরী তীর যেটা হিউনিক তীর নামে পরিচিত।

  হুনদের তীর

এই তীরই তাদের দীর্ঘদিন যুদ্ধক্ষেত্রে অপরাজিত রেখেছিলো । এই তীর সাধারণত একাধিক পদার্থের সংমিশ্রনে তৈরী হতো এবং খুব হালকা ছিলো । যার ফলে একে অনেক বেশী বাঁকানো যেত লংরেঞ্জ বা শর্ট রেঞ্জ এই দুই ক্ষেত্রেই এই তীর ছিলো অত্যন্ত ভয়ানক । বেশীরভাগ হুন যোদ্ধাই চলন্ত ঘোড়ার উপরে বসে তীর ছুড়তে পারতেন ,যেকারনে তারা ছিলো অত্যন্ত ভয়ানক । তীর ছাড়াও এরা ঢাল এবং তরবারি ব্যবহৃত করতো ।

রাজপূত
এদের অবস্থান ছিলো উত্তর ভারতের রাজস্থানে , এদের নীতি ছিলো কিছুটা নাৎসিদের মত অর্থাৎ কখনো আত্মসমর্পন নয় , মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। বেশীরভাগ যুদ্ধেই এরা অপরাজিত। তাদেরকে ইংল্যান্ডের নাইট বা জাপানের সামুরাইদের সাথে তুলনা করা হয় । রাজপূতরা শুধু অস্ত্র চালনাই দক্ষ ছিলোনা ,পাশাপাশি তারা খালি হাতেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারতো । তাদের প্রধান অস্ত্র ছিলো খান্দা নামের একধরনের তলোয়ার , চক্রম নামের উড়ন্ত চাক্তি এবং এক ধরনের ছুরী যেটার নাম ছিলো অ্যারা।  
রাজপূতদের অস্ত্র

অনেকেই হয়তো ভাবছেন রাজপূতরা শুধু যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী , তারা সংগীতেও পারদর্শী ছিলেন । সম্রাট আকবরের নবরত্নের একজন ইতিহাসের বিখ্যাত কন্ঠশিল্পী তান সেন একজন রাজপূত ছিলো , কথিত আছে তান সেন গান গেয়ে বৃস্টি নামাতে পারতেন । এবং এই তান সেনের জন্যই সম্রাট আকবরের সাথে রাজপূতদের যুদ্ধের উপক্রম হয়েছিলো ।

YOUR NAMEAbout Me
আসসালামু আলাইকুম। নবীন বাংলা ব্লগ সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম। আসলে এই ব্লগ সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এবং আমি এই সাইটের এডমিন, মূলত ব্লগিং প্রাকটিস এবং মুক্ত জ্ঞাণ চর্চার জন্যই এই সাইটটি ওপেন করেছি। আমার সাইটের পোস্টগুলো অন্যান্য সুনাম খ্যাত ব্লগ সাইটে সমূহে পাবলিশ করে থাকি তথারুপ টেকটিউন্স, টিউনারপেইজ। ইনশাআল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব নবীন বাংলা ব্লগে লেখালেখি করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে অন্যান্য লেখকদের বাছাই করা পোস্টগুলো পাবলিশ করা হয়। এবং ইচ্ছা করলে আপনিও এই ব্লগের অতিথি লেখক হিসাবে শুরু করতে পারেন।পরিশেষে আমার সাইট কিংবা প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে কোন আপনাদের অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহন করা হবে। আবারো ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সবাইকে!!
Follow : | | Facebook | Twitter

Post a Comment

 
Top