0
অবাক হওয়ার কিছু নেই। শিরোনামটা হুজুগে বাঙ্গালির আবেগমথিত কোনো মন্তব্য নয়। বরং মন্তব্যটি যিনি করেছিলেন তাকে জঙ্গলের কিংবদন্তি মনে করা হয়। তিনি সর্বকালের সেরা শিকারি। ভারতবর্ষের জঙ্গল বিশেষ করে উত্তরভারতের জঙ্গলের রাজা তিনি।
জঙ্গলপ্রিয় মানুষ মাত্রই তাকে চেনেন। কালাধুঙ্গি, নৈনিতাল, গাড়োয়াল, রুদ্রপ্রয়াগ, চম্পবত, হরিদ্বার, কেদারনাথ, হৃষিকেশের পাহাড়ি জঙ্গলের পাদদেশে, অলকানদা, মন্দাকিনি, গাঙ্গেয়ত্রীর উপকুলে দাপিয়ে বেড়ানো জিম করবেটকে মনে করা হয় জঙ্গলের বিজ্ঞানী।

জঙ্গলের প্রতিটি পরত, বনের প্রতিটা পশুর আচরণ ছিল যার হাতের তালুর মতো চেনা। সেই জিম করবেট যখন মন্তব্যটি করেছিলেন, তখন সেটাকে আর ফেলনা বলে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কী ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন জিম করবেট?
করবেটের মতে, আফ্রিকা বা পৃথিবীর কোনো বনের কনো জন্তুই গায়ে পড়ে মানুষের সাথে লাগতে আসে না। অর্থাৎ মানুষই যদি বন্যজন্তুকে বিরক্ত করে তবেই সে আক্রমণ করবে তার আগে নয়। কারণ সব জীব-জানোয়ারের মধ্যে মানুষকে ভয় পাওয়ার বা এড়িয়ে চলার একটা সহজাত প্রবৃত্তি আছে।
তাই একটা মানুষ খুব চেঁচামেচি করে একপাল হাতিকে তাড়িয়ে দিতে পারে, এবং দেয়ও! আর এই প্রবৃত্তি আছে বলেই, আফ্রিকার সিংহসংকুল অরণ্যে বা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম জঙ্গলেও (সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের জঙ্গলেও শিকারী পশু বাস করত) মানুষ বাস করতে পারে তাই শিকারি যখন শিকারে যান তখন যতক্ষণ না তিনি কোন শিকারকে আঘাত করছেন ততক্ষণ তার কোন ভয়ের কারণ নেই।
এটা সাধারণ নিয়ম। ব্যতিক্রম যেখানে মানুষখেকো বাঘ বা সিংহ আছে সেখানে। সে বনে শুধু মানুষই শিকারি নয়, সেখানে বাঘ বা সিংহও শিকারি আর মানুষ তার শিকার বা খাদ্য।

মানুষ বা মানুষখেকো যখন পরস্পরের শিকার তখন মানুষখেকোর একটা বাড়তি সুবিধা থাকে, সে বনটাকে মানুষের চেয়ে ভালো চেনে। তাছাড়া সে মানুষের চেয়ে অনেক ভাল শিকারি, শক্তি, চোখ, কান আর জঙ্গলকে ব্যবহার করার ক্ষমতার সঙ্গে মানুষের চোখ, কান ইত্যাদির কোন তুলনাই হয় না!
এই তফাতটুকুর জন্য সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক জঙ্গল। আরও কারণ আছে, ফরেস্ট বিভাগের আন্দাজমতে, সুন্দরবনের যে অংশটা বাংলাদেশের ভাগে পড়েছে, শুধু তাতেই শ’ পাঁচেক বাঘ আছে। সবগুলো বাঘই বেঙ্গল টাইগার, আর সবগুলোই মানুষখেকো।
অবশ্য সুন্দরবনের সব বাঘই যে মানুষ খেয়েছে তা নয়, অনেক বাঘ আছে যেগুলো এখনও মানুষ খায়নি। তাই বলে সেগুলো মানুষখেকো নয় একথা বলা যাবে না। কারণ সেগুলো এখনও সুযোগ পায়নি পায়নি বলে খায়নি। সুযোগ পেলে মোটেও দেরি করবে না।
একজন শিকারী আফ্রিকার জঙ্গলে আর একজন শিকারী সুন্দরবনে পথ হারিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দুজনের কাছেই রাইফেল আর যথেষ্ট গুলি ভরা টোঁটা আছে। যিনি আফ্রিকাতে তার দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবার কারণ নেই।
তিনি বিরক্ত না করলে কোন বন্যজন্তু তাকে আক্রমণ করবে না, ক্ষিদে পেলে তিনি হরিণ মেরে, আর পিপাসা পেলে নদী বা খালের ঝর্ণার বা নিদেনপক্ষে ডোবার পানি খেয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারবেন। রাতে গাছে উঠে বা নিচে আগুন জ্বেলে ঘুম দিলে কেউ বিরক্ত করবে না। তারপর একদিক পানে চলতে চলতে আজ হোক কাল হোক কোন না কোন লোকালয়ে পৌঁছুতে পারবেন।
আর যিনি সুন্দরবনে পথ হারিয়েছেন, তিনি যখনই কোন বাঘের চোখে পড়বেন সেই মুহূর্ত থেকে বাঘ তার পিছু লেগে যাবে ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ার জন্য। আর তিনি যদি নিজেও বাঘের মতই শিকারী না হন, এবং তা হওয়ার সম্ভাবনা নেহায়েতই কম, তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সব দুশ্চিন্তার অবসান ঘটবে। এক মহূর্তের অসাবধানতাই যথেষ্ট।
তার ক্ষিদে পেলে হরিণ মারতে পারেন। তবে কোথাও পানি জোটাতে পারবেন না। সব পানি লোনা। দিনে দুবার সমুদ্রের জোয়ার এসে সমস্ত বনটা ডুবিয়ে দেয়, কাজেই মাটিতে ঘুমানোর চেষ্টা করাও বোকামী। গাছগুলোর অধিকাংশই নানা রকম সাপে ভর্তি।
আর এক দিক পানে চলার প্রশ্নই ওঠে না এই জন্য, যে সমস্ত বনভূমিটা ছোটবড় নদী, আর খাল দিয়ে জালের মত করে ছাওয়া। সাঁতরে খাল নদী পার হবেন সেটাও দুরাশা, বড় বড় কুমীরে ভর্তি।

কোথায় পৌঁছাবেন সে প্রশ্নও অবান্তর কারন, সুন্দরবনের বন এলাকায় কোন মানুষের বাস নেই বললেই চলে। বিপদে পড়লে কেউ যদি ইচ্ছা করেন দৌঁড়াবেন এমনকি তার উপায়ও নেই, মাটিতে বিছিয়ে আছে খোঁচা খোঁচা ঠেসমূল। দেখে দেখে সাবধানে পা ফেলতে হয়। নাহলে পা চিরে ঢুঁকে যাবে ধারালো শলা!
এতো গেলো জিম করবেটের ব্যাখ্যা। আধুনিক প্রজুক্তির যুগেও ডিসকভারি আর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলও সুন্দরবনের আশে পাশে খুব বেশি ঘেষতে পারছে না সেটা সুন্দরবন দুর্গম বলেই।

YOUR NAMEAbout Me
আসসালামু আলাইকুম। নবীন বাংলা ব্লগ সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম। আসলে এই ব্লগ সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এবং আমি এই সাইটের এডমিন, মূলত ব্লগিং প্রাকটিস এবং মুক্ত জ্ঞাণ চর্চার জন্যই এই সাইটটি ওপেন করেছি। আমার সাইটের পোস্টগুলো অন্যান্য সুনাম খ্যাত ব্লগ সাইটে সমূহে পাবলিশ করে থাকি তথারুপ টেকটিউন্স, টিউনারপেইজ। ইনশাআল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব নবীন বাংলা ব্লগে লেখালেখি করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে অন্যান্য লেখকদের বাছাই করা পোস্টগুলো পাবলিশ করা হয়। এবং ইচ্ছা করলে আপনিও এই ব্লগের অতিথি লেখক হিসাবে শুরু করতে পারেন।পরিশেষে আমার সাইট কিংবা প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে কোন আপনাদের অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহন করা হবে। আবারো ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সবাইকে!!
Follow : | | Facebook | Twitter

Post a Comment

 
Top