0
নয়া দিল্লি: একটা-দুটো বছর নয়৷ ১৭৫ বছর পার করে ফেলল দেশের সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্র দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া৷  আগামী ৩ নভেম্বর টাইমস অব ইন্ডিয়ার ১৭৫ তম জন্মবার্ষিকী৷ সোমবার দেশব্যাপী সেই জন্মোৎসব পালনের সূচনা করলেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিনীত জৈন৷

১৭৫ বছর ধরে টানা একটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়ে চলেছে, এমন নজির ভারতে নেই৷ দীর্ঘ সময় ধরে ভারতকথা শুনিয়ে চলেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া৷ তা সে পরাধীন ভারতের হোক অথবা স্বাধীন ভারতের৷ বিরাট দেশের নানা ইতিহাসের সাক্ষী থেকে তার  বর্ণনা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছে এই সংবাদপত্র৷পরাধীনতা থেকে স্বাধীনতায় উত্তরণ, দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনের নানা পরিবর্তন তুলে ধরেছে এই পত্রিকা৷
বম্বে টাইমস অ্যান্ড জার্নাল অফ কমার্স নামে যে দ্বিসাপ্তাহিক পত্রিকার সূচনা হয়েছিল ১৭৫ বছর আগে, আজ তা এক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান৷ প্রায় এক কোটি আটচল্লিশ লক্ষ সম্মিলিত পাঠক সংখ্যা নিয়ে দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া আজ বিশ্বের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি ব্রডশিট দৈনিক সংবাদপত্র৷
টাইমস সব সময় পাঠকের কণ্ঠস্বর হয়ে তার সমস্যা তুলে ধরেছে৷ একেবারে গোড়ার দিকে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ গঠনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল এই সংবাদপত্রই৷
১৮৭৪ সালের ১৬ অক্টোবর এই যুদ্ধ জেতার পর টাইমস-এ ছাপা হয়েছিল, ‘আমাদের কাগজে প্রকাশিত মতামত যে অবশেষে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে তাতে আমরা খুশি৷ এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে ইউরোপের আদলে এখানে একটি স্টক এক্সচেঞ্জ গঠিত হলে সুবিধাই হবে৷’ আজ বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের (শেয়ার দরে কোম্পানির মূল্য) হিসাবে বিশ্বের দশম বৃহত্তম শেয়ার বাজার৷
মহাত্মা গান্ধীর জাতীয় মঞ্চে প্রবেশ করার পর তার প্রতিটি পদক্ষেপ এই সংবাদপত্র সঙ্গে অনুসরণ করেছে৷ ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের জন্মকে স্বাগত জানিয়ে এই পত্রিকা লিখেছিল, ‘সাম্প্রতিক কালে ভারতের মাটিতে এমন ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ আর দেখা যায়নি৷’
ডান্ডি লবণ সত্যাগ্রহের কথাই ধরা যাক: বিশদ বিবরণ-সহ এই কাগজ লিখেছিল সেই দিনটির কথা যেদিন গান্ধীজি ডান্ডি পৌঁছে একমুঠো লবণ হাতে নিয়ে এই অত্যাবশ্যকীয় পণ্যটির উপর অন্যায্য করের প্রতিবাদ করেছিলেন৷
১৯৩১-এ ভগৎ সিং, শুকদেব ও রাজগুরু, এই বিপ্লবী-ত্রয়ীর বীরগাথা এবং তাদের বিচারের কথা এই কাগজে রোজই ছাপা হতো৷ এই রিপোর্টেই প্রকাশিত হয়েছিল যে ভগৎ সিং একটি বারের জন্যও ক্ষমাভিক্ষা করেননি৷ মহামান্য বিচারককেও অবাক করে দিয়ে তিনি বলেন তাকে যেন ফাঁসি না-দিয়ে গুলি করে মারা হয়৷
টাইমস অব ইন্ডিয়ার পুরোনো পাতা উল্টে যাওয়া মানেই ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে পড়া৷ টাইমসের মতো ভারত কথাকে এত সত্যনিষ্ঠ ভাবে বোধ হয় আর কেউ পরিবেশন করেনি৷ সেই জন্যই সংবাদপত্রটির আদর্শ, ‘সত্যের জয় হোক৷’ সত্যকে বাদ দিয়ে ১৭৫ বছর কারও পক্ষে টিকে থাকাই সম্ভব নয়৷
১৫ অগস্ট, ১৯৪৭-এ সারা দেশের সঙ্গে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়াও আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিল৷ ব্যানার হেডলাইন ছিল, ‘ভারতের স্বাধীনতার জন্ম, রাষ্ট্রের জন্মের প্রথম শুভক্ষণ৷’ তল্পিতল্পা গুটিয়ে ব্রিটিশরা তখন দেশে ফেরার পথে৷ প্রথম পাতায় বেরোল, ‘অবশেষে নামানো হল ইউনিয়ন জ্যাক৷’
এর অব্যবহিত পরেই এল বিষাদের দিন – ১৯৪৮-এর ৩০ জানুয়ারি যেদিন গান্ধীজি আততায়ীর বুলেটে প্রাণ হারালেন৷ সেদিন শোকস্তব্ধ মানুষের পাশেই ছিল এই সংবাদপত্রটি৷ তার পর এলো ভারতের শক্তিধর হয়ে ওঠার বহু মুহূর্ত৷ ভারতের সংবিধান প্রণয়ন হলো, গৃহীতও হলো, অসংখ্য রাজ্যের পুনর্গঠন হলো, সবুজ বিপ্লব এলো, খাদ্য উৎপাদনে দেশ স্বাবলম্বী হলো৷ গণতন্ত্র কুঁড়ি মেললো, প্রাপ্তবয়স্কও হল৷ আর এই সংবাদপত্র জাতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল৷
চীন যুদ্ধের সময় সরকারের নীতিগত ভুলেই যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিপর্যয়, সে কথাও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেয় এই সংবাদপত্রই৷
আবার ১৯৭১-এ বাংলাদেশের জন্মলগ্নে বিজয়ী ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঢাকায় আগমনের সময় উপস্থিত ছিল এই সংবাদপত্র৷ গর্বিত ভারতবাসী এই কাগজের মাধ্যমে জানতে পারে লেফটেনান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পরাজিত পাকিস্তান বাহিনীর লেফটেনান্ট জেনেরাল এ এ কে নিয়াজির আত্মসমর্পণের কথা৷
জরুরি অবস্থার কঠিন দিনগুলি, সংবাদমাধ্যমের কন্ঠরোধ, কংগ্রেস সরকারের পতন ও পরবর্তী অধ্যায়ে জনতা পার্টির সরকার নিয়ে ডামাডোলের সাক্ষীও থেকেছে এই সংবাদপত্র৷ বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ৯/১১, ২৬/১১-র মতো ঘটনার তীব্রতা ছুঁয়েছিল এই কাগজকেও৷
আনন্দঘন মুহূর্তও কম আসেনি৷ ১৯৮৩ আর ২০১১-য় ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিশ্বজয়, বিজ্ঞানে সাফল্য, মাদার টেরেসা এবং অমর্ত্য সেনের নোবেল পুরস্কার লাভ এমনই কয়েকটি মণিমানিক্য৷
আজ টাইমস গ্রুপ এমনই একটি আধুনিক মাল্টিমিডিয়া সংস্থা যারা উদার অর্থনীতি, খোলা বাজার এবং বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে একাত্তীকরণ সমর্থন করে৷
দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ইন্টারনেট সংস্করণ আজ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নিউজ ওয়েবসাইট৷ এটি এখন মোবাইল ফোনেও পাওয়া যায়৷ এই বছরের জানুয়ারিতে এর সম্মিলিত পেজ ভিউ ছিল ৫০ কোটি৷ এর মধ্যে মোবাইলে দেখেছেন ৩৫ শতাংশ মানুষ৷
এই সংবাদপত্র প্রিন্ট, অনলাইন এবং মোবাইলের মাধ্যমে ভারত ও বিদেশে ‘ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া’কে প্রায় চার কোটি ষাট লক্ষ পাঠকের কাছে তুলে ধরছে৷ ভারতের বৃহত্তম মিডিয়া সংস্থা বেনেট কোলম্যান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ফ্ল্যাগশিপ হয়ে দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া ১৭৫ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে৷
দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভারতের ইতিহাসের এক স্থপতিও বটে৷ ভারত এক সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে উঠে আসার অনেক আগে থেকেই দেশের প্রতিটি ঘটনা এই সংবাদপত্রে ঠাঁই পেয়েছে৷ আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বিশ্বের দরবারে ভারতের আরও শক্তিশালী হওয়ার যাত্রাপথে এ যেন নিশ্চিত আনন্দগান৷ সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

YOUR NAMEAbout Me
আসসালামু আলাইকুম। নবীন বাংলা ব্লগ সাইটে ভিজিট করার জন্য আপনাকে স্বাগতম। আসলে এই ব্লগ সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এবং আমি এই সাইটের এডমিন, মূলত ব্লগিং প্রাকটিস এবং মুক্ত জ্ঞাণ চর্চার জন্যই এই সাইটটি ওপেন করেছি। আমার সাইটের পোস্টগুলো অন্যান্য সুনাম খ্যাত ব্লগ সাইটে সমূহে পাবলিশ করে থাকি তথারুপ টেকটিউন্স, টিউনারপেইজ। ইনশাআল্লাহ যতদিন বেঁচে থাকব নবীন বাংলা ব্লগে লেখালেখি করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এখানে অন্যান্য লেখকদের বাছাই করা পোস্টগুলো পাবলিশ করা হয়। এবং ইচ্ছা করলে আপনিও এই ব্লগের অতিথি লেখক হিসাবে শুরু করতে পারেন।পরিশেষে আমার সাইট কিংবা প্রকাশিত লেখা সম্পর্কে কোন আপনাদের অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহন করা হবে। আবারো ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সবাইকে!!
Follow : | | Facebook | Twitter

Post a Comment

 
Top